অভিবাসীদের মানবাধিকার প্রশ্নে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করলেন পোপ লিও

এফএনএস অনলাইন: | প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৫১ পিএম
অভিবাসীদের মানবাধিকার প্রশ্নে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করলেন পোপ লিও

গত মে মাসে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পোপ লিও রক্ষণশীল ক্যাথলিকদের মন জয় করেছিলেন। তিনি পূর্বসূরি পোপ ফ্রান্সিসের মতো বিতর্কিত সামাজিক ইস্যুতে না গিয়ে বরং ঐতিহ্যের প্রতি জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলার পর এবার রক্ষণশীলদের সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল হয়ে উঠছে।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়াটার্স এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে।

মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পোপ লিও বলেন, “কেউ যদি বলে আমি গর্ভপাতের বিরুদ্ধে, কিন্তু একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অমানবিক আচরণের পক্ষে-তাহলে আমি জানি না এটাকে কতটা প্রো-লাইফ বলা যায়।”

এই বক্তব্যে রক্ষণশীল মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। টেক্সাসের সাবেক বিশপ জোসেফ স্ট্রিকল্যান্ড, যিনি পোপ ফ্রান্সিসের কঠোর সমালোচক হলেও লিওকে আগে সমর্থন দিয়েছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন- “এতে মানবজীবনের পবিত্রতা ও চার্চের নৈতিক অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।”

রক্ষণশীল ব্লগ রোরাতে কেলি হতাশা প্রকাশ করে লিখেছে, “পোপের সাক্ষাৎকারে আমরা ক্লান্ত। তার বরং আগের নীরবতায় ফিরে যাওয়া উচিত।”

হোয়াইট হাউসও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট পোপের অভিবাসন সংক্রান্ত মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সমালোচনায় নড়বেন না লিও

ভ্যাটিকান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিবাসন ইস্যু লিওর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি অবস্থান পরিবর্তন করবেন না। তবে এতে তার ঘোষিত লক্ষ্য-একটি বিভক্ত ও মেরুকৃত বৈশ্বিক চার্চকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা-চাপের মুখে পড়তে পারে।

পোপ জীবনীকার এলিস অ্যালেন বলেন, “আমেরিকান রক্ষণশীলদের কখনও না কখনও লিওর সমালোচনায় পড়তে হবেই। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”

কার্ডিনাল মাইকেল জের্নি জানান, লিও খ্রিষ্টীয় ধর্মের প্রাচীন শিক্ষা অনুসরণ করছেন-“সময়-অসময়ে গসপেল প্রচার করা।”

পেরুভিয়ান মিশনারি থেকে পোপ

বিশ্বমঞ্চে তেমন পরিচিত না হলেও পেরুতে দীর্ঘদিন মিশনারি হিসেবে কাজ করেছেন লিও। সেখান থেকেই তার অভিবাসী ও সামাজিক ইস্যুতে সোচ্চার হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। অ্যালেনের মতে, “তিনি গর্ভপাতকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মনে করেন, তবে অভিবাসনকেও সমান গুরুত্ব দেন।”

প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস ১২ বছরের দায়িত্বকালে রক্ষণশীলদের ক্ষুব্ধ করেছিলেন। তিনি ল্যাটিন মেস সীমিত করেছিলেন, প্রথাগত আচার-অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সমকামী দম্পতিদের আশীর্বাদ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন।

রক্ষণশীলদের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি

লিও নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ঐতিহ্যবাহী মোজেত্তা নামের লাল পোশাক পরে প্রকাশ্যে আসেন-যা ফ্রান্সিস কখনও করেননি। এতে রক্ষণশীলদের মধ্যে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কার্ডিনাল রেমন্ড বার্ক ও কার্ডিনাল রবার্ট সারা’র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন, যারা ফ্রান্সিসের তীব্র সমালোচক ছিলেন।

তবে লিও যখন সমকামী ক্যাথলিকদের নিয়ে কাজ করা এক মার্কিন পাদ্রীকে বিশেষ সাক্ষাৎ দেন, তখনই সমালোচনা শুরু হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মবিষয়ক গবেষক ডেভিড গিবসন বলেন, “রক্ষণশীলরা ভেবেছিল লিও তাদের পুরো এজেন্ডাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি তা করবেন না।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে