নতুন আইনে ক্ষমতা বাড়ল, সরাসরি শাস্তি দেবে নির্বাচন কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩৯ পিএম | প্রকাশ: ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:১৫ পিএম
নতুন আইনে ক্ষমতা বাড়ল, সরাসরি শাস্তি দেবে নির্বাচন কমিশন

ভোটে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অনিয়ম, গাফিলতি বা কর্তব্যে অবহেলার বিরুদ্ধে এখন থেকে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাষ্ট্রপতি রবিবার (৫ অক্টোবর) “নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন–১৯৯১” সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছেন। এর ফলে অনিয়ম ধরা পড়লে ইসি আর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর না করে সরাসরি শাস্তি দিতে পারবে।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর সরকার ইসির প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। সংশোধিত আইনে “নির্বাচন কর্মকর্তা” বলতে এখন শুধু রিটার্নিং, প্রিজাইডিং বা পোলিং কর্মকর্তাকেই নয়, বরং দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বোঝানো হয়েছে। ফলে ভোটের সময় যেকোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি নিয়মভঙ্গ করেন, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।

পূর্বে অনিয়ম প্রমাণ হলেও নির্বাচন কমিশন কেবল শাস্তির সুপারিশ পাঠাতো নিয়োগকারী সংস্থাকে, যা বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করত। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ মেললেও সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। এখন নতুন আইনে ইসি সরাসরি শাস্তি দিতে পারবে, এবং কমিশনের সিদ্ধান্ত অন্য যেকোনো আইনের চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে।

সংশোধিত আইনে ধারা ৫–এর অধীনে সাতটি উপধারা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তা যদি ইসির আদেশ অমান্য করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করেন বা দায়িত্বে অবহেলা করেন, তবে তা “অসদাচরণ” হিসেবে গণ্য হবে।

কমিশন বা রিটার্নিং অফিসার চাইলে ওই কর্মকর্তাকে দুই মাস পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবেন, যা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের আদেশ হিসেবে গণ্য হবে।

এছাড়া কমিশন কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের প্রস্তাব দিলে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে ইসিকে জানাতে হবে। এমন ব্যবস্থা কর্মকর্তার চাকরিবই ও গোপনীয় প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কোনো বিষয়ে সরকার ও কমিশনের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে, কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

ধারা ৬–এর সংশোধনে অনিয়ম বা নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে।

কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানার মুখোমুখি হতে পারেন।

এছাড়া, কেউ বৈধ কারণ ছাড়া নির্বাচনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে বা কাউকে দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে, তার শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছর জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা। কমিশনের নির্দেশ অমান্য করলে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর জেল বা বিশ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

২০২২ সালের ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরায় অনিয়ম ধরা পড়লে ইসি ৫০টি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করে। পরবর্তীতে আরও একটি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। দুপুরের আগেই ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় পুরো নির্বাচন স্থগিত হয়। তদন্তে ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ মেলে। ইসি তখন নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেও চার মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন আইনে এমন বিলম্ব বা অমান্যতা আর সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, এ আইন কার্যকর হলে ভোটে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে অনিয়মের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে আসবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে