বাংলাদেশের রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করা প্রবীণ নেতা ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক তোফায়েল আহমেদ বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। ৮২ বছর বয়সী এই রাজনীতিক গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় চিকিৎসকেরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে তোফায়েল আহমেদের জামাতা ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিন গণমাধ্যমকে জানান, “আমার শ্বশুরের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, সংকটাপন্ন। তবে হৃদযন্ত্র কাজ করছে। আমরা সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।”
পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরেই তোফায়েল আহমেদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। প্রায় তিন বছর আগে তিনি প্রথমবারের মতো মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হন। পরবর্তী সময়ে দুই দফায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর আবারও স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর থেকে তাঁর স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং শরীরের বাঁ দিক অবশ হয়ে যায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন এবং বিছানায় শুয়ে থাকতেন।
চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। গত কয়েকদিন ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা ও হৃদ্যন্ত্রের দুর্বলতার কারণে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
তোফায়েল আহমেদ ১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা জেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি ছিলেন এবং উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর তিনি একাধিকবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি দীর্ঘদিন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ভোলায় দাঙ্গা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে মামলা হয়।
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা হয়ে ওঠা তোফায়েল আহমেদ এক সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর অবস্থা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও প্রার্থনা চলছে।