বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং নারী-সহায়ক (‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’) হিসেবে আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। নারী ভোটারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, এবার এমন একটি নির্বাচন হবে, যেখানে দলীয় আচরণ কিংবা প্রভাবের কোনো সুযোগ থাকবে না।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নারী অধিকারকর্মীদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি বলেন, “অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের সঙ্গে আমি এবার যোগ করতে চাই একটি ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি ইলেকশন’। আমাদের লক্ষ্য—সব ভোটার, বিশেষ করে নারী ভোটারদের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।”
তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের পর দেশে নারী ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আগে যেখানে নারী ভোটার পুরুষ ভোটারের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম ছিল, এখন সেই ব্যবধান নেমে এসেছে ১৮ লাখে। সিইসির ভাষায়, “এটা আমাদের জন্য বড় সাফল্য। নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
নারী ভোটারের অনুপস্থিতির পেছনে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “প্রত্যন্ত এলাকার অনেক নারী নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও এমন হয়েছে।”
এর আগে একই দিনে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “কোনো কর্মকর্তা যদি দলীয় আচরণ করেন বা পক্ষপাতমূলক মনোভাব দেখান, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন থেকে মেসেজ হবে—যদি কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করো, তাহলে তোমার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগে একটা সংস্কৃতি ছিল, কর্মকর্তাদের ওপর চাপ থাকত নির্দিষ্ট পক্ষে কাজ করার। এবার সেই সংস্কৃতি থাকবে না। আমরা চাই মাঠ প্রশাসনের সবাই বুঝুক—তাদের একমাত্র দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন।”
সিইসি জানান, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কেবল ভোটগ্রহণ নয়, বরং এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা যাতে কেউ ভয় বা প্রভাবের কারণে ভোট দিতে বাধাগ্রস্ত না হন। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে।
নাসির উদ্দিন বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আয়নার মতো স্বচ্ছ একটি নির্বাচন। মানুষ যেন বিশ্বাস করে—এবার নির্বাচন সত্যিই স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও সবার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”
সভায় নির্বাচন কমিশনারগণ, সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।