নদীর বুকে ভেসে চলা কল্প জাহাজ যেন জীবন্ত শিল্পকর্ম

এফএনএস (বলরাম দাশ অনুপম; কক্সবাজার) : | প্রকাশ: ৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:৫৯ পিএম
নদীর বুকে ভেসে চলা কল্প জাহাজ যেন জীবন্ত শিল্পকর্ম

পেখম মেলা ময়ূরের ভেসে যাওয়া, পঙ্খিরাজ ঘোড়া কিংবা হাতির এদিক-ওদিক ছোটাছুটি, আর নাগরাজ বীরদর্পে নদীর বুকে ভেসে চলা-প্রাণহীন কল্প জাহাজ যেন হয়ে ওঠে জীবন্ত শিল্পকর্ম।

কক্সবাজারের রামুতে মঙ্গলবার বিকেলে কল্প জাহাজ ভাসা ও ফানুস উৎসবে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। শত বছরের পুরনো এই উৎসব পরিণত হয়েছিল এক প্রাণের মিলনমেলায়। যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অংশ নেয় হাজারো মানুষ। যা পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় উদাহরন। 

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে মহামতি বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে এসব প্রতীকী জাহাজ ভাসানো হয়। নদীতে ভাসানো হয় দৃষ্টিনন্দন কারুকাজে তৈরি ৭টি জাহাজ। প্রতিটি জাহাজ তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় এক মাস।

দশর্ণাথীরা  বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই উৎসব শুরু করেছেন। শত বছর ধরে এটা চলছে। আমরা চাই নতুন প্রজন্মও যেন এই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে।’

শতবছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে নিয়মিত প্রচলনের কথা জানালেন আয়োজকরা। কল্প জাহাজ ভাসা উৎসবের আহ্বায়ক মিথুন বড়-য়া বোথাম বলেন, ‘প্রতিবছর প্রবারণার পরের দিন বাঁকখালী নদীতে এই কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব হয়ে আসছে। সামনে দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে এই আয়োজন হবে। এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই উৎসব করে আসছে। আমরা সারাবিশ্বে শান্তি বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে জাহাজ ভাসানো উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্ন্তর্বতীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান, পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহীন, কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল।

এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ, নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এই দেশের পথচলা। আসুন- ঐতিহ্য, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে আমরা লালন করি। আগামীও আমরা এটা লালন করতে থাকবো। তবে কোন দুষ্টু চক্র যাতে আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’

ইতিহাস বলছে, দুইশো বছর আগে মিয়ানমারে কল্প জাহাজ ভাসানোর প্রথা শুরু হলেও, রামুতে তা চলে আসছে শত বছর ধরে। প্রবারণা পূর্ণিমায় এই আয়োজন যেন নতুন প্রজন্মকে শিকড়ের সন্ধান করিয়ে দেয় বারবার।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে