টিলাঘেরা সবুজ ক্যাম্পাস, মাথার ওপর ছায়াদানকারী গাছপালা, আর শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ। এভাবেই পরিচিত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ছাত্রী হলগুলো। কিন্তু এখন সেই শান্ত পরিবেশ যেন রূপ নিয়েছে আতঙ্কের জনপদে। কারণ, এক দল ‘অতিথি’ প্রতিদিনই অনধিকার প্রবেশ করছে হল প্রাঙ্গণে। তারা আর কেউ নয়, দলবদ্ধ বানর।
গত কয়েক মাসে একের পর এক বানরের হামলায় আহত হয়েছেন অনেক ছাত্রী। হাত ছোঁড়া, কামড়ানো, খাবার ছিনিয়ে নেওয়া, এসব যেন এখন নিত্য দিনের রুটিন। সিকৃবির দুররে সামাদ রহমান হল ও সুহাসিনী দাস হল এখন বানরের নিয়মিত টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। হলের চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে, গাছের ডালপালা কাটা হয়েছে যাতে বানর লাফিয়ে প্রবেশ না করতে পারে, এমনকি ট্র্যাপও বসানো হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও বানরের দৌরাত্ম্য থামছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আলিমুল ইসলাম জানান, “আমরা বন বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী আমরা বানরের বিরুদ্ধে সরাসরি কিছু করতে পারছি না। আশাকরি বন বিভাগ ব্যাবস্থা নিবে”
এই অচলাবস্থা নিরসনে উপাচার্য ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ঢাকায় বন ভবনে বন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ আমির হোসাইন চৌধুরী, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোঃ সানাউল্লাহ পাটোয়ারী ও বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান।
সেখানে সিকৃবি কর্তৃপক্ষ বানরের দৌরাত্ম্য বন্ধে দ্রুত, কার্যকর এবং আইনসম্মত পদক্ষেপের জন্য বন বিভাগের প্রতি জোরালো অনুরোধ জানান। বন বিভাগও বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
উপাচার্য বলেন, “আমরা আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছি, ভ্যাকসিন দিচ্ছি। কিন্তু সবাইকে অনুরোধ করবো। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা দিয়েই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভাষায়, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তবে বন বিভাগের সহায়তা ছাড়া এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
পরিবেশ কর্মী ও সাংবাদিক শেখ আশরাফুল আলম নাসির বলেন, ছাত্রীদের জন্য নির্মিত নিরাপদ আবাসস্থল আজ বন্যপ্রাণীর অনুপ্রবেশে অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এই সংকট কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একক সমস্যা নয়, বরং বন ও নগর ব্যবস্থাপনার সমন্বয়হীনতার জ্বলন্ত উদাহরণ। এখন সময়, বানরের নয়, মানবিকতার জয় হোক।