রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে না

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম; সিলেট) : | প্রকাশ: ১০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে না

জামায়াতে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, “চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্বাধীনতার পর জাতির জন্য সর্বোচ্চ অর্জন। এই অর্জনের জন্য ২ হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন এবং ৩০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এই রক্তের ঋণ পরিশোধের জন্য জাতি পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে না।”

তিনি বলেন, “আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এই দাবি শুধু জামায়াতের নয়, দেশপ্রেমিক জনতারও। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।”

এডভোকেট জুবায়ের অভিযোগ করে বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর (চৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হধষ জবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের ৫ দফা উপস্থাপনের পর কেউ কেউ বলছেন আমরা নির্বাচন চাই না। অথচ এক বছর আগেই ২০০ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছি। বড় দলের একটি আসনে এখনো ১০ জনেরও বেশি প্রার্থী কাজ করছেন। প্রার্থী ঘোষণা করলেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ শুরু হয়ে যাবে!”

তিনি আরও বলেন, “কেউ কেউ পিআর পদ্ধতি বুঝেন না, সময় গেলে তারাও বুঝবেন। কেয়ারটেকারের মতো পিআর পদ্ধতিও এদেশে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হবে।”

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাদ জুমা সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশ শেষে বিশাল গণমিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমীর ও সিলেট-১ আসনে মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান। বক্তব্য দেন জেলা নায়েবে আমীর ও সিলেট-২ আসনে প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সিলেট মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি তারেক মনোয়ার প্রমুখ।

এডভোকেট জুবায়ের বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রব্যবস্থা সংস্কারের জন্য ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করেছে। এ কমিশন টানা আট মাসে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। এর মধ্যে ৮৪টি প্রস্তাবে দলগুলো একমত হয়েছে। সংবিধানে জামায়াত প্রস্তাবিত জুলাই অধ্যাদেশ জারির ব্যাপারেও সবাই একমত হয়েছেন। এর জন্য গণভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই সরকারের উচিত দ্রুত গণভোটের আয়োজন করা।”

তিনি আরও বলেন, “পিআর পদ্ধতি নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। অথচ এই পদ্ধতি কার্যকর হলে ভোটের হার বাড়বে, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে। আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হতে হবে। স্বৈরশাসকের সহযোগী ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে, অন্যথায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না।”

বিশেষ অতিথি মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, “জনগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলকে ক্ষমতায় বসিয়ে তাদের শাসন দেখেছে। এবার তারা দাড়িপাল্লাকে বিজয়ী করতে চায়। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করুন এবং জামায়াতের ৫ দফা দাবি মেনে নিন, নইলে ছাত্র-জনতা আবার রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।”

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, “আমরা বহুবার শুনেছি- দলের চেয়ে দেশ বড়, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। কিন্তু যখন স্বার্থে আঘাত আসে, তখন ব্যক্তি বড় হয়ে যায়। এই জাতিকে আর ধোঁকা দেওয়া যাবে না। যেনতেন নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় ফেরার দিন শেষ। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জামায়াত ঘোষিত ৫ দফা দাবিই এখন সময়ের দাবি।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে