বিএনপির ৩১ দফার মাঝে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের মিল রয়েছে: মির্জা ফখরুল

এফ এম কামাল হোসেন; কাপাসিয়া, গাজীপুর
| আপডেট: ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:২২ পিএম | প্রকাশ: ১১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
বিএনপির ৩১ দফার মাঝে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের মিল রয়েছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মরহুম ব্রিগেডিয়ার হান্নান শাহ্ দলের দুর্দিনে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে দলের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। আমি তাকে বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা করতাম। তিনি একজন দেশ প্রেমিক ও দল প্রেমিক ছিলেন। তিনি জাতীয় নেতা ছিলেন, কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থকে বড়ো করে দেখেননি। তিনি সবসময় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আগামী দিনের রাস্ট্র নায়ক তারেক রহমানকে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে রাজনীতি করেছেন। এখন আমরা স্বাধীন দেশে বাস করছি, অথচ এক বছর আগেও আমরা পরাধীন ছিলাম, আমাদের দলীয় নেতা কর্মীরা পালিয়ে বেড়িয়েছে। আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদ ছিলো না। এখন আমরা মন ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। তাই আমরা অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য। ড. ইউনুস একজন নোবেল বিজয়ী। সারা বিশ্বে তাঁর গ্রহনযোগ্যতা রয়েছে। তিনি চেষ্টা করছেন, আওয়ামীলীগের ধ্বংস করে দিয়েছিল যেসব জায়গা সেগুলো সংস্কারের। আওয়ামীলীগের রেখে যাওয়া অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে দেশ নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। উপদেষ্ঠাদের কেউ কেউ বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগের কথা উল্লেখ করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান। আমাদের নেতা তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের মিল রয়েছে। তাই আগামী দিনে বিএনপি নির্বাচিত হলে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে। বিগত বিএনপির সরকারের সময় মা-বোনদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ছিল। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের ফ্রি করে দেয়া হয়েছিল। তিনি স্মরণ সভায় হান্নান শাহ্'র রেখে যাওয়া বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। স্মরণসভার উপস্থিতি দেখা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনি ট্রেন এখন লাইনে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলে পতিত স্বৈরশাসক ফ্যাসিস্ট ভারতে গিয়ে পালিয়েছে। যে ভারত কখনো বাংলাদেশের ভালো চায়নি। আমরা ফারাক্কা ও তিস্তার ন্যায্য হিস্যা পাইনি। আমাদের সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। আমাদের নির্বাচন গুলোতেও ভারত হস্তক্ষেপ করেছে। যারা বার বার বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত করেছে, তারা যেন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে না পারে। তাই দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি হান্নান শাহ্'র স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে গাজীপুর -৪, কাপাসিয়া থেকে যাতে শাহ্ রিয়াজুল হান্নানকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারে, সেজন্য দলীয় নেতা কর্মীদের হাতে তুলে দিয়ে উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি ১১ অক্টোবর শনিবার বিকেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আসম হান্নান শাহ্'র নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন। কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক একেএম ফজলুল হক মিলন। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল। কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক ড. এম এ কাইয়ুম, সহ শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ইশরাক আহমেদ সিদ্দিকী প্রমুখ । বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, যারা বলেন বিএনপি সংস্কার চায় না। তাদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সংস্কারের জন্মদাতা, সংস্কারের ধারক বাহক হচ্ছে বিএনপি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য একমাত্র পথ সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। গণতন্ত্রের জন্য আর বিকল্প কোনো পথ নেই। কয়েকজন মিলে আইন করলে গণতন্ত্র হয় না। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত গণতন্ত্রে ফিরে যেতে পারব না। বাংলাদেশের মানুষই গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী। তারা বার বার লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে স্বাধীনতার জন্য। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সেই লড়াইয়ে মানুষ বার বার হোঁচট খেয়েছে। যতবার হোঁচট খেয়েছে, ততবার উঠে দাঁড়িয়েছে এবং আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বিজয় অর্জন করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতা তুলে ধরে তিনি বলেন, গেল ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় এক হাজার লোককে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সকলে সোচ্চার ও সজাগ থাকতে হবে। যারা দেশের ক্ষতি করেছে তারা জেনো কোনদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে সে সিদ্ধান্ত আপনারা নিবেন। মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু কিছু মানুষ বা সংগঠন জুলাই আন্দোলনকে নিজেদের আন্দোলন বলে দাবি করেন। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপি দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেছে। আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। বিএনপি সহ দেশের সকল মানুষকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান। স্মরণ সভার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘাগটিয়া গ্রামের হান্নান শাহ্'র কবর জিয়ারত এবং পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে হান্নান শাহ্'র রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে