বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। উত্তেজনার পর শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রেসক্লাব এলাকা ছেড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের শহীদ মিনারে চলে যেতে অনুরোধ করে। তবে একদল শিক্ষক তা প্রত্যাখ্যান করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তখন পুলিশ পরপর কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে এবং কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রেসক্লাবের সামনে থাকা শিক্ষকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। পরে পুলিশ তোপখানা সড়ক, সেগুনবাগিচা মোড় এবং সার্ক ফোয়ারার আশপাশে অবস্থান নেয়।
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুলিশের অনুরোধে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ শহীদ মিনারে চলে গিয়েছিল। এরপর সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিলে বাকিরাও সেখানেই যোগ দেন। নওগাঁ থেকে আসা শিক্ষক অহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছি। এখান থেকেই আন্দোলন চালাব।”
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, “জনদুর্ভোগ এড়াতে আমরা প্রেসক্লাব এলাকা ছেড়ে শহীদ মিনারে অবস্থান নেব। এখান থেকেই লাগাতার কর্মসূচি চলবে। প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না, ক্লাসেও ফিরব না।”
দুপুর ১১টার দিকে শিক্ষকদের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। অধ্যক্ষ আজিজী বলেন, “আমাদের দাবি বাস্তবায়নের প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত লাগাতার কর্মসূচি চলবে। মঙ্গলবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি পালন করা হবে।”
রোববার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা যোগ দেন। তাদের দাবি, বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ করতে হবে, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে এবং উৎসবভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। ৫ অক্টোবর তা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষক সংগঠনগুলো সিদ্ধান্তটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেয়। পরে ৬ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাড়িভাড়া ভাতা দুই থেকে তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। বর্তমানে তারা মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা এবং ১ হাজার ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া তারা বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পান, যা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে নির্ধারিত।