চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর, ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি অপারেটর, ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং কেরাণীগঞ্জের পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব আগামী ডিসেম্বরে বিদেশি অপারেটরদের হাতে দেওয়া হবে। লালদিয়া টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য, বাকি দুটি টার্মিনাল ২৫ বছর মেয়াদে পরিচালনার দায়িত্ব পাবে।

রোববার (১২ অক্টোবর) ঢাকার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, “আমরা দেশের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ছাড় দেব না। সর্বোচ্চ পর্যায়ের দর কষাকষি চলছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি হবে।”

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বেসরকারি অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড পরিচালনা করে আসছিল। চলতি জুলাইতে তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদেশি অপারেটরকে দায়িত্ব দিতে উদ্যোগ নেন। এই কাজে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের নাম উঠে আসে। ছয় মাসের জন্য টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বও নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড পায়।

নৌসচিব ইউসুফ বলেন, “বিদেশি অপারেটর দায়িত্ব নিলে বন্দরের কার্যক্ষমতা তিনগুণের মতো বাড়বে। এতে জাহাজের অপেক্ষার সময় কমে যাবে, খরচ কমবে এবং রপ্তানিকারকের লিড টাইমও কমবে। নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা আরও উন্নত হবে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বন্দরে ছয়টি স্ক্যানার থাকলেও অধিকাংশ সময় ৩-৪টি সচল থাকে না, যা জট সৃষ্টি করে। বিদেশি অপারেটর থাকলে আধুনিক উপায়ে স্ক্যান করা হবে এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুততর হবে।

সেমিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্রগামী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, “সারাবিশ্বে সমুদ্রপথে পরিবহনে নতুন জ্বালানি ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। সরকারী সহযোগিতা থাকলে বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যা বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং রেমিটেন্স প্রবাহও উন্নত হবে।”

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার মনে করান, “পুরনো জাহাজ ভাঙা শিল্পে আমরা এগিয়ে আছি। জাহাজ নির্মাণেও সুযোগ তৈরি করতে ব্যাংকের সহযোগিতা ও রপ্তানি নীতিতে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন। কাঁচামাল আমদানি শুল্কমুক্ত হলে উৎপাদন খরচ কমে বিদেশিরাও বাংলাদেশকে বেছে নেবে।”

বিদেশি অপারেটরের হাতে বন্দরের দায়িত্ব দিলে বন্দর পরিচালনার সক্ষমতা, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং পণ্য পরিবহনের গতি বৃদ্ধি পাবে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালগুলোকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে