মোহনপুরে কিস্তির জন্য ভ্যানচালকে মারধর, দোকানেই ‘বিষপানে’ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

এম এম মামুন; রাজশাহী
| আপডেট: ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:২১ পিএম | প্রকাশ: ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:২১ পিএম
মোহনপুরে কিস্তির জন্য ভ্যানচালকে মারধর, দোকানেই ‘বিষপানে’ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট থেকে কিস্তিতে একটি রেফ্রিজারেটর কিনেছিলেন অটোভ্যানচালক হাশেম মণ্ডল। কিন্তু কিস্তির টাকা শোধ করতে পারছিলেন না বলে অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এ কারণে ইলেকট্রনিকস দোকানি মারধর করে হাশেমের ভ্যানটি কেড়ে নেন। এতে অপমান ও ক্ষোভে গত বৃহস্পতিবার তিনি ওই দোকানের ভেতরেই বিষ পান (রাসায়নিক) করেন। এরপর দুই দিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে শনিবার সন্ধ্যায় মারা যান হাশেম। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দুপুরে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হাশেম মণ্ডল মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া গ্রামের মেছের মণ্ডলের ছেলে। হাশেমের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, তাঁর স্বামী মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট ‘আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ইলেকট্রনিকস দোকান থেকে কিস্তিতে রেফ্রিজারেটরটি কিনেছিলেন। তিনি নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলেও বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক আকরাম আলী ও তাঁর সহযোগীরা বকেয়া ১০ হাজার টাকা এবং সুদ বাবদ ১০ হাজার টাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চাপ সৃষ্টি করছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে হাশেম যাত্রী নিয়ে কেশরহাট বাজারে গেলে ওই বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক আকরাম আলী, তাঁর ছোট ভাই আকতার হোসেন ও কয়েকজন কর্মচারী মিলে হাশেমের অটোভ্যানটি জোরপূর্বক কেড়ে নেন এবং তাঁকে মারধর করেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে হাশেম স্থানীয় বাজার থেকে বিষ কিনে ওই বিক্রয়কেন্দ্রের ভেতরেই পান করেন। এরপর বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মচারীরা তাঁকে দ্রুত বাইরে ফেলে রেখে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন হাশেমকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক ভর্তি না নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে দুই দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হাশেম মণ্ডল মারা যান। ঘটনার পর থেকে আলিফ মীম এন্টারপ্রাইজের মালিক আকরাম আলী ও তাঁর ভাই আকতার হোসেন কেশরহাটে তাঁদের দুটি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে পলাতক। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলা এড়াতে তাঁরা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তিন লাখ টাকায় বিষয়টি ‘দফারফা’ করার চেষ্টা করছেন। ময়নাতদন্ত শেষে রোববার দুপুরে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে মরদেহ দাফন করা হয়। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, রেফ্রিজারেটরের কিস্তির টাকার জন্য অটোভ্যান কেড়ে নেওয়ার ঘটনা সঠিক। এ কারণে ভ্যানচালক হাশেম বিষ পান করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ জন্য নগরীর রাজপাড়া থানাকে জিডি মূলে লাশটি ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করতে থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে