মিরপুর ট্র্যাজেডি: ১৬ মরদেহ ঢামেকে, ডিএনএ পরীক্ষার পর হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০২:০৪ এএম
মিরপুর ট্র্যাজেডি: ১৬ মরদেহ ঢামেকে, ডিএনএ পরীক্ষার পর হস্তান্তর
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকার শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও কেমিক্যালের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জন শ্রমিকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। চেহারা দেখে কারও পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় ডিএনএ পরীক্ষার পর মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো ঢামেকে আনা হয়। ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক সার্জন মো. মোস্তাক আহমেদ জানান, মরদেহগুলোর মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী। প্রায় সবগুলো মরদেহই পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, “মরদেহগুলো আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বুধবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পর আইন অনুযায়ী মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, প্রতিটি মরদেহই এমনভাবে পুড়ে গেছে যে দেখে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের মধ্যে নয়জন পুরুষ এবং সাতজন নারী রয়েছেন। ডিএনএ পরীক্ষার ফল মিললে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে দেওয়া হবে।”

এদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিখোঁজ স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে। কেউ কেউ হাতে নিয়ে এসেছেন নিখোঁজ পরিবারের সদস্যদের ছবি। বরগুনার ধর্মপাশা উপজেলার সুলতান মিয়া খুঁজছেন তাঁর মেয়ে মার্জিয়া সুলতানা (১৮) ও জামাতা জয় মিয়াকে (২০)। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে আর জামাই দুজনই ওই গার্মেন্টসে কাজ করত। আগুন লাগার পর থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেই। যদি ওরা মারা গিয়ে থাকে, অন্তত মরদেহ তো দেখতে চাই।”

এছাড়া লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার আব্দুল কাইয়ুম খুঁজছেন তাঁর শ্যালিকা মৌসুমী আক্তারকে (১৮)। তিনি বলেন, “ঘটনার পর অনেক হাসপাতালে খুঁজেছি। কোথাও পাইনি। মরদেহ উদ্ধারের কথা শুনে ঢাকা মেডিকেলে এসেছি।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কেমিক্যাল গোডাউনে আগুন লাগে। ১১টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। শুরুতে পাঁচটি ইউনিট, পরে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দিয়ে মোট ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নিহতদের মরদেহ ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিচতলায় আগুনের তীব্রতা এবং ছাদে ওঠার দরজায় তালা থাকায় অনেকে বের হতে পারেননি। বিষাক্ত ধোঁয়ায় অজ্ঞান হয়ে তারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।

এ ঘটনায় তিনজন আহত শ্রমিককে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে