সুন্দরপুর রেলস্ট্রেশন একযুগ বন্ধ

এফএনএস(টিপু সুলতান,কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ) | প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:০০ এএম
সুন্দরপুর রেলস্ট্রেশন একযুগ বন্ধ

জনবল-সংকট লোকসানের বোঝা থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরপুর রেল স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।এতে ট্রেনে যাতায়াত করা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। অন্যদিকে উপার্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেলওয়ে বিভাগ।কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপের অভাবে স্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খোয়া গেছে মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। এলাকাবাসীর দাবি রেলস্টেশনটি পুনরায় চালু হলে যাত্রীসেবার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে।তবে রেলওয়ে বিভাগ বলছে, লোকসান ও জনবল সংকটের কারণেই এমন বেহাল দশা। এতে পরিত্যক্ত স্টেশন ও আশপাশের সরকারি জমি দখল করে রেখেছে প্রভাবশালিরা। এমনকি খোয়া গেছে স্টেশনের মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। স্থানীয়রা বলছেন, স্টেশনটি বন্ধ হওয়ার এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হয়েছে। এছাড়া রেলের জায়গা দখল করে ফেলছে প্রভাবশালিরা।এদিকে লোকসানের লাগাম টানতে লোকাল, মেইলসহ সকল ট্রেন পর্যায় ক্রমে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের একটি বড় অংশ দূরের স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করছেন। দীর্ঘদিন স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। 

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলায় তিনটি রেলষ্টেশন রয়েছে তন্মধ্যে দুটি চালু রয়েছে আর সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি প্রায় একযুগ ধরে বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ থাকা সুন্দরপুর স্টেশনটি রেলের খাতায় অলাভজনক হিসেবে চিহ্নিত। লোকসান ও লোকবল সংকটসহ নানা সমস্যার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সুন্দরপুর রেলওয়ে স্টেশন। রাতে এসব স্টেশনে বাড়ছে মাদকসেবীদের আনাগোনা ঘটছে চুরি,ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ। স্টেশনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর থেকে। কিছু  জনবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে কালীগঞ্জের সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি। স্টেশনের অধিকাংশ মালামাল ঘরের টিন, লোহার রড,জানালা,চেয়ার,টেবিল ভবনের দরজা চোরে নিয়ে গেছে ও চারপাশে সকল জমি দখল করে এলাকার মানুষ কৃষি আবাদ করছে। ১৯৫১ সালে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়।এ ষ্টেশনটি ২০১২ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়।

সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি একযুগ আগে সকল প্রকার ট্রেন দাঁড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে রাত ও দিনে প্রতিদিন ৫ টি ট্রেন থেমে যাত্রী আনা নেওয়া করতো।  প্রায ১২ বছর আগে হঠাৎ করে সকল ট্রেন থামা বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এলাকার মানুষের পড়তে হয় বড় ধরনের বিড়ম্বনায়। এলাকার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে সাবেক  এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার রেলমন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে দুপুর ২ টায় মহানন্দা ট্রেনটি থামানোর ব্যবস্থা করে দেন।এ ছাড়া অন্য কোন ট্রেন এখন আর থামে না ও রেলস্টেশনে কেউ কোন দায়িত্ব পালন করে না। সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায়  পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ কোন স্টেশন মাস্টার না থাকায় সাধারণ লোকাল একটি ট্রেনের যাত্রীরা টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠতে হয়। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে ট্রেনের ভিতর থেকে চেকারদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হয়। বর্তমানে একটি লোকাল ট্রেন থামে ও অন্য ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর কোন ট্রেন সুন্দরপুর স্টেশনে থামে না।বন্ধ থাকা সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের।বর্তমানে রেলে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সুন্দরপুর রেলেষ্ট্রেশনটি গণপরিবহণ হিসাবে পরিচিত ছিল একসময়। এ স্টেশনে দাঁড়াত বলে যাত্রীরা কম দূরত্বেও ট্রেনে চলাচল করত। নিম্ন-আয়ের লোকজন, স্কুল- কলেজ শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের ভরসা ছিল ট্রেন।লোকসান ও লোকবল সংকটের কারণ দেখিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ চালুর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্টেশনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। পাশাপাশি এসব স্টেশনে ময়লা-আবর্জনা জমে ভূতুড়ে পরিবেশে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে,অন্যদিকে যাত্রীরা তাদের যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। স্টেশনের দুপাশের জমিগুলো দখল করে বিভিন্ন ফসলের চাষ করছে কেউ বা স্টেশনের প্লাটফর্মে ধান,পাট, তিলসহ বিভিন্ন ফসল, শুকাতে দেওয়া হয়েছে গো খাদ্যের পল বিচালির পালা। সুন্দরপুর বাজার সামনে স্টেশনের সিগন্যাল ভবনটিতে দুই জন স্টাফ দায়িত্ব পালন করেন। স্টেশন থেকে প্রায় ৫০০ গজ সামনে এক গেটম্যানের সিগন্যাল ভবন।দায়িত্বে থাকা রুবেল আহম্মেদ বলেন, তিনি এখানে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে কোটচাদপুর রেলস্টেশন মাস্টার প্রতিদিন সুন্দরপুর রেলেষ্টেশনে এসে ট্রেন পারাপার করতো।স্টেশনে ট্রেনের নির্ধারিত সময় অনুমান করে যাত্রীরা লোকাল ট্রেনের জন্য এখন আর অপেক্ষা করে না।

সুন্দরপুর গ্রামের শাহাজান আলী,কাঠালিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ জানান, একসময় এ স্টেশনে ট্রেনের সময়সূচি ও টিকিট পাওয়া যেত। এখন ট্রেন থামে না যে কারণে লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়, কিন্তু  দীর্ঘদিন ধরে এ স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন যাতায়াতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। একসময়ের জমজমাট স্টেশনটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে সর্বসময় আড্ডা, নেশাখোরদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনটি।কালের বিবর্তনে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় রেলওয়ে স্টেশনর গুরুত্ব ও চাহিদা কিছুটা কমে গেলেও রেলওয়ের নিরাপদ এবং আরামদায়ক ভ্রমণের ফলে এখনও এ অঞ্চলের মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করতে ব্যাকুল।স্টেশন বন্ধ থাকায় একটি ট্রেন থামে ফলে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা। এ এলাকার প্রতিটি রেলস্টেশনে একজন স্টেশন মাস্টার ও সহকারী মাস্টার এবং চারজন করে পয়েন্টম্যান থাকার কথা।দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় যাতায়াতের সমস্যায় পড়ছেন আশপাশের ১৫ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষ। অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রেলের মূল্যবান সম্পদ। সন্ধ্যের পর অন্ধকারের মধ্যে আজও একাকী দাঁড়িয়ে থাকে স্টেশন সুন্দরপুর রেলস্টেশন।বাংলাদেশ রেলওয়ে কতৃপক্ষ জনবল সংকটের কারণে স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় একযুগ আগে। স্টেশনটি চালুর জন্য গ্রামবাসি কয়েক দফা সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি চালাচালি করে আশ্বাস ছাড়া সুফল মেলেনি। এক সময় প্লাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা করতেন শত শত মানুষ। ট্রেনে চড়ে কেউ যশোর,খুলনা,চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া,কালীগঞ্জ.দর্শনায় অফিস করতেন।কেউ আবার নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী ঢাকায় বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। এ স্টেশনের সামনে দিয়ে প্রতিদিন আপ ও ডাউনে ১৬টি ট্রেন চলাচল করে কিন্ত সুন্দরপুর স্টেশনের ভাগ্যে মহানন্দা নামে লোকান ট্রেন টি থেকে থাকে।সুন্দরপুররেলওয়েস্টেশনদিয়েযেসবট্রেনচলাচলকরেতন্মধ্যেরূপসা,সীমান্ত,কপোতাক্ষ,সাগরদাড়ি,সুন্দরবন,চিত্রা,বেনাপোল,মহানন্দা,রকেট, নকশীকাঁথা ট্রেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ রেলষ্টেশন মাস্টার শাহাজান আলী জানান, সারা বছর লোকসান ও লোকজনবলের অভাবে সুন্দরপুর রেলষ্টেশন টিতে ট্রেন থামা বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শুধু মাত্র মহানন্দা লোকাল ট্রেন টি কিছু সময়ের জন্য বিরতি দেয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে