পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় সুপারির দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন শত শত সুপারি চাষি ও বাগান মালিক। প্রতি বছর লাভজনক মৌসুমি ফসল হিসেবে পরিচিত এই সুপারির দরপতনে হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে কৃষকদের মধ্যে।
উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলোতে বহু কৃষক পতিত জমি ও বসতবাড়ির আশপাশে সুপারির বাগান করেছেন। সুপারি থেকে প্রাপ্ত আয়েই অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অনেকে সুপারি সংগ্রহ করে মাটির নিচে সংরক্ষণ করে রাখেন, যাতে পরে ভালো দামে বিক্রি করা যায়। কিন্তু এবারের বাজার পরিস্থিতি সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার পাড়েরহাট বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কুড়ি (১১০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। অথচ মাত্র ১৫ দিন আগেও এর দাম ছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ফলে উৎপাদন খরচও উঠে আসছে না বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।
উত্তর ভবানীপুর গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক হাওলাদার বলেন, “আমি চার বিঘা জমির সুপারির বাগান কিনেছি। সার, শ্রমিক, পরিচর্যা সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন দাম এত কম যে খরচও উঠছে না।”
একই গ্রামের আরেক কৃষক জাকির হোসেন বলেন, “এবার ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম নেই। লোকসান গুনছি।”
কৃষকরা দাবি করছেন, বাজারে এক ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে যারা ইচ্ছেমতো দাম কমিয়ে দিচ্ছে। সরকারি কোনো মূল্য নির্ধারণ না থাকায় এই চক্র সুবিধা নিচ্ছে।
ঘোষেরহাট বাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, “আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সুপারি কিনে রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাঠাই। কিন্তু আড়ৎদাররা এবার দাম কম দিচ্ছে, তাই আমরাও বাধ্য হয়ে কম দামে কিনছি।”
এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, “দক্ষিণাঞ্চলে সুপারি চাষের হার বেশি। এখানকার সুপারি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশজুড়ে সরবরাহ হয়, কিছু বিদেশেও যায়। তবে সরকারি মূল্য নির্ধারণ না থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে সুপারি কিনছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।”