কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ, রাজস্ব আদায় নিয়ে শঙ্কা

এফএনএস (সাকিব মামুন; লংগদু ও বাঘাইছড়ি, রাঙ্গামাটি) : | প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বন্ধ, রাজস্ব আদায় নিয়ে শঙ্কা

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি)'র রাঙামাটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রাজস্ব আদায়ের সময় বৃদ্ধির দাবিতে ঘাটে মাছ আহরণ বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে গেছে।

কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য আহরণ, অবতরণ ও পরিবহনের ওপর প্রায় ২৬ হাজার জেলে, ৫ হাজার শ্রমিক ও ৫ হাজার ব্যবসায়ী নির্ভরশীল।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই বছর ধরে মাছ ধরে তা ঘাটে নামানোর জন্য স্বল্প সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যায় হ্রদে যে জাল ফেলা হয় সেই জাল উঠে আসতে রাত হয়ে যায়। এতে মাছগুলো বিভিন্ন উপজেলা থেকে বোটে করে রাঙামাটির বিএফডিসির ঘাটে আসতে রাত ১০টা বেজে যায়। তবে রাতে সেই মাছের রাজস্ব গ্রহণ করে না বিএফডিসি।

এতে মাছের গুণগত মান নষ্ট ও পচে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে জেলেরাও মাছের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন।

ব্যবসায়ীদের দাবি, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা, সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা এবং লালী খোপের জন্য রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র খোলা রেখে মাছের রাজস্ব আদায় করার সময় বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন সময়সূচি নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত মাছ অবতরণ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন তারা।

কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. কবির সওদাগর বলেন, ‘সন্ধ্যায় যে জালটি হ্রদে ফেলা হয় সেটি উঠে আসতে রাত ৯টা বেজে যায়। লংগদু, মাইনী, মারিশ্যা, বরকল, হরিণার মত দূরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে মাছগুলো অবতরণ ঘাটে আসতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু মাছগুলো অবতরণ ঘাটে এসে পৌঁছলেও বিএফডিসি রাজস্ব আদায় করে না। পরের দিন সকালে রাজস্ব আদায় করলেও ততক্ষণে মাছগুলোর গুণগত মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই তারা রাজস্ব আদায়ের সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে অবতরণ বন্ধ করেছেন।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজ বলেন, গত ২-৩ বছর ধরে অবতরণের সময় কমানো হয়েছে। এর আগে মধ্যরাতেও মাছ অবতরণ হত। আমরা যদি রাতেও মাছ অবতরণ করতে পারি তবে সেই মাছগুলোর ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। আমরা জেলেদের মাছ শিকার করতে নিষেধ করিনি। তারা মাছ আহরণ করে তাদের ইচ্ছেনুযায়ী যেকোনো জায়গায় বিক্রি করতে পারে। শুধু আমাদের বিএফডিসি ঘাটে অবতরণ বন্ধ রেখেছি।

কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, মাঝখানে একটি বিরতিসহ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মোট ১২ ঘণ্টা মাছ অবতরণ হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যদি মধ্যরাত পর্যন্ত অবতরণ হয় তাহলে হ্রদে ওভারফিশিং হবে। মাছগুলো তার পরিপক্কতা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাবে না।

তিনি ব্যবসায়ীদের দাবি অযৌক্তিক জানিয়ে আরো বলেন, সরকার অতিরিক্ত মাছ আহরণের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। পাশাপাশি এই বিষয়ে নানান বিধিনিষেধও আছে। অতিরিক্ত মাছ আহরণ নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য যাতে শ্রম আইন লঙ্ঘন না হয়, মাছে সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ সব বিষয় বিবেচনা করে মাছ অবতরণের এই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি বাস্তবায়ন করলে হ্রদের মৎস্য শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।