কালীগঞ্জসহ ৩ উপজেলার মানুষের ভরসা বাশের সাকো

এফএনএস (টিপু সুলতান; কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
কালীগঞ্জসহ ৩ উপজেলার মানুষের ভরসা বাশের সাকো

ঝিনাইদহ জেলার তিনটি উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। বাঁশের সাঁকো দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সেতু নির্মাণের দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।এছাড়া এই তিন উপজেলার শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি। নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো দুই ঘাটের সংযোগ রক্ষা করে। ওই বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা যাতায়াত করে থাকেন।লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে সাইকেল ও মোটর সাইকেল নিয়ে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন বছরের পর বছর। অনেকে আবার পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন।শিক্ষার্থীরা হেঁটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। সাবধানে চলাচল করছে সবাই,সাঁকোর ওপর থেকে পড়ে অনেকে আহত হয়েছেন। একটু অন্যমনস্ক হলে যেকোনো সময় পড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিন উপজেলার প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় এই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় গ্রামবাসীদের। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকার মানুষ এই বাশের সাকো দিয়ে চলাচল করছে। স্থানীয়দের উদ্যোগে নির্মিত সাঁকোটি প্রতি বছর মেরামত করেন নিজেরাই।

ঝিনাইদহ,কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর উপজেলার শেষ সীমানায় চিত্রা নদীর উপর ফাজিলপুর- কাদিরকোল নামক স্থানে স্থায়ী কোনো সেতু না থাকায় নিজেদের নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।এক-দুই দিনের নয়, বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তিন উপজেলার মানুষকে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সাঁকো পার হতে গিয়ে অনেকবার দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছে।বর্ষায় এ দুর্ভোগ পৌঁছায় চরমে। সাঁকো মেরামতে সরকারি কোনো অনুদান পাওয়া যায় না। প্রতি বছর দুই পারের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ-খুটি। তিন উপজেলার,গান্না ইউনিয়ন, সুন্দরপুর দুর্গাপুর, এলাঙ্গি ও মহারাজপুর ইউনিয়নের চিত্রা নদীর উপর মানুষের চলাচলে ভরসা একটি মাত্র বাঁশের সাঁকো। কিন্তু সেই সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার করতে না পারায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে।ঝিনাইদহ সদর,কালীগঞ্জ ও কোটচাদপুর উপজেলার উপজেলা কাদিরকোল, ফাদিলপুর,ইকড়া, কালুখালি, সিংদহ, আলাইপুর, রামনগর, কুল্লাগাছাসহ অন্তত ১৫ গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। তিন উপজেলার ৪ ইউনিয়নের শত শত মানুষ চলচলের একমাত্র ভরসা এই বাশের সাকো।

এ ছাড়া এলাকার বেশির ভাগ কৃষি জমি নদীর দুই প্রান্তে, ফলে চাষাবাদসহ কৃষিপণ্য এই পথ দিয়েই আনা-নেওয়া করা হয়। এদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন এইসাঁকোর ওপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়।এলাকাবাসীস্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার ধরনার পরও সেখানে সরকারি ভাবে কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি।বিভিন্ন সময় সরকার ক্ষমতায় থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকায় মরিচ, পিঁয়াজ,আলু,ধান,পাট,শাকসবজিসহ নানা ধরনের ফসল উৎপাদন হয়।সেতু না থাকায় এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।অনেক রাজনৈতিক নেতা সেতু নির্মাণের জন্য একাধিকবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। সেতু নির্মাণ করলে এলাকার মানুষ যেমন উপকৃত হবেন। অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতি নির্ভর এলাকার মানুষ তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন। 

ফাদিলপুর গ্রামের মানুষ টাকা তুলে এলাকার যুবকদের নিয়ে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করে। রামনগর গ্রামের মহিদুল উসলাম ও হাফেজ জুনায়িদ হাসান বলেন, এই বাশের সাকোর কারণে এলাকার মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে চলাচল করে থাকে। এখানে একটি স্থায়ী ব্রীজ হওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করেন।ফাদিলপুর,কাদিরকোল নামক স্থানে চিত্রা নদীর উপর বাশের সাকো দিয়ে ৩ উপজেলার মানুষ ও এএন্ডজে কলেজ,কেবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কাদিরকোল দাখিল মাদ্রাসা, কালুখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,গান্না কলেজ,মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কালুখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চলাচল করে থাকে। আবার যশোর, ঝিনাইদহ,কালীগঞ্জ,কোটচাদপুর উপজেলায় যেতে হয় এই সাকো দিয়ে।অপর দিকে রয়েছে বাঘমারা বাজার,কালুখালি বাজার,কাদিরকোল বাজার, আলাইপুর ও সিংদহসহ বিভিন্ন বাজারে যাবার একমাত্র ভরসা ফাদিলপুর চিত্রা নদীর উপর বাশের সাকো। সাকোটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা। এলাকার মানুষের এখন প্রধান চিন্তা আদেও কখন ও এখানে ব্রিজ হবে কিনা সেটা নিয়ে রয়েছে নানা শংশয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে