ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে সবসময়ই পছন্দের তালিকায় স্থান করে নেয় পাহাড় কিংবা সমুদ্র। সমুদ্রের নোনাজল পিছিয়ে অধিকাংশ জনই পাহাড় ভ্রমণ বেছে নেন। তন্মধ্যে সাজেক ভ্যালি বর্তমান সময়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। পাহাড়ি জনপদ রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত সাজেক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন হিসাবে খ্যাত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ১৮শ ফুট। সাজেকের অবস্থান পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে হলেও ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। খাগড়াছড়ি জেলা থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর দীঘিনালা থেকে ৪০ প্রায় কিলোমিটার।
কী দেখবেন
চারপাশে মনোরম পাহাড় সারি সারি, সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সাজেক এমনই আশ্চর্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে আপনি হতে পারেন চমৎকৃত। কখনও বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মতো মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়া-উড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।
সুউচ্চ কংলাক পাহাড় সাজেক ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছে প্রধান আকর্ষণ। আর সাজেক ভ্যালির শেষ গ্রাম কংলক পাড়া লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকা। কংলাক পাড়া থেকেই কর্ণফুলী নদী উৎপত্তিস্থল ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। চাইলে রুইলুই পাড়া থেকে দুই ঘণ্টা ট্রেকিং করে কমলক ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন। সুন্দর এই ঝর্ণাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝর্ণা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
সাজেক-এর সূর্যোদয়
দিন কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলির আচরে আঁকা ছবির মত, সময় গড়ায় তবু সাজেক পুরাতন হয় না। সাজেকে গেলে অবশ্যই সকালে ভোরের সময়টা মিস করবেন না। মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলবন্ধন এই সময়েই বসে। এজন্য আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। বিকেলের কোন উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্তের রঙিন রূপ আপনাকে বিমোহিত করবেই। আর সন্ধ্যার পর আকাশের হাজার কোটি তারার মেলা, আপনার প্রাণ জুড়িয়ে দিবে নিমিষেই। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দেখা পাবেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের।
ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশ ও পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাপন। সহজ সরল এই সব মানুষের সান্নিধ্যে আপনার ভাল লাগবে। আর হাতে সময় থাকলে সাজেক ভ্যালি থেকে ফেরার পথে ঢ়ুঁ মেরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার থেকে।
কখন যাবেন
সাজেকের রূপের আসলে তুলনা হয় না। সারা বছরই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে সাজেক। বছরের যে কোনও সময় আপনি সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে জুলাই থেকে নভেম্বর মাসে সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা দেখা যায় বেশি। তাই এই সময়টাই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে ভাল।
সাজেক যাবার উপায়
সাজেকের অবস্থান রাঙামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা হয়ে সাজেক যাতায়াত অনেক সহজ। তাই প্রথমেই আপনাকে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি বাসে করে যেতে পারবেন। এসি, নন এসি এইসব বাস ভাড়া ৫শ থেকে হাজার টাকার সীমায়। এসি বাসে যেতে চাইলে বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনে ৮শ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন। আর বাসগুলো সাধারণত রাত ১০ টার মধ্যে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া শান্তি পরিবহন বাস সরাসরি দীঘিনালা যায়, ভাড়া প্রায় ৭শ টাকা। ঢাকায় গাবতলী, কলাবাগানসহ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে এইসব পরিবহণের কাউন্টার। ছুটির দিন গুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো নয়তো পড়ে টিকেট পেতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছ থেকে জীপগাড়ি বা চাঁন্দের গাড়ি অথবা সাজেক পরিবহন রিজার্ভ নিয়ে সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া নিবে ৮-১০ হাজার টাকা। এক গাড়িতে করে ১০-১২ জন যেতে পারবেন। তবে লোক কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে সিএনজি দিয়ে সাজেক যেতে পারবেন। রিজার্ভ ভাড়া লাগবে ৪-৫ হাজার টাকা। তবে পাহাড়ি উঁচু নিচু রাস্তা বলে সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভাল।
সতর্কতা
পাহাড়ি এসব সর্পিলাকার উঁচু নিচু সড়কে প্রতিটা মুহূর্তে থাকে মৃত্যুর হাতছানি। তাই বাইক যোগে ভ্রমণপিপাসুদের অবশ্যই পাহাড়ি সড়কে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়াও অন্যান্য গাড়িতে অতি উল্লাসিত হয়ে বিপদ ডেকে আনা যাবে না।