রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হলো বরগুনার যুবক খালিদ হাসান সাব্বির (২৯)-এর মরদেহ। জীবন যুদ্বের মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই অকালে ঝরে গেলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল, সমাজসেবী এই তরুণ।
স্বজনদের আকুতি ও অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ তাঁর মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নং ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর বান্দরগাছিয়া গ্রামে। খালিদ পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন এবং জীবনধারণের তাগিদেই মাসখানেক আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন।
খালিদের বাবা মনিরুল ইসলাম জোমাদ্দার, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। দেশ সেবায় জীবন পার করলেও, সন্তানের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেননা।
অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই মনিরুল ইসলাম জোমাদ্দার সন্তানের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে এবং রূপনগর থানা এলাকায় পাগলের মতো ঘুরেছেন। একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ হয়েও সন্তানের জন্য তাঁর তিন দিনে হাসপাতালের মর্গে একমাত্র প্রিয় সন্তানকে খোজাখুজি সবাইকে ব্যথিত করেছে।
নিহতের বাবা অশ্রুসিক্ত নয়নে সাংবাদিকদের জানান, "আমার একমাত্র ছেলে আমাকে আর কেউ বাবা বলে ডাকবে না। আমার ছেলেটা মাত্র মাসখানেক আগে বরগুনা থেকে ঢাকায় এলো। মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগার খবর শোনার পর থেকে আমার চোখে আর ঘুম নেই। হাসপাতালের মর্গে গিয়ে দেখি মরদেহগুলো এতটাই বিকৃত যে, নিজের সন্তানকেও চেনার উপায় নেই। শুধু ডিএনএ পরীক্ষার ভরসায় ছিলাম। এমন মৃত্যু যেন আর কারো ভাগ্যে না জোটে।"
খালিদের স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, "ওই দিন আমার সাথে তেমন কোনো কথা না হলেও মেসেজে দুই একবার 'হায় হ্যালো' হয়। দুপুরের দিকে আমাদের পরিচিত এক লোক ফোন করে জানান খালিদের পাশের ভবনে আগুন লেগেছে। তার পর থেকে ফোন দিলে খালিদকে আর পাওয়া যায় না। তারপরেই আমরা সাথে সাথে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেই।"
শোকের মাঝে খালিদের ফুপা সাংবাদিকদের বলেন, "খালিদ যে অফিসে চাকরি করত, আগুন লাগার ওই মুহূর্তে সে তিন তলায় ছিল। আগুন লাগার খবর পেয়ে নিচে আসলেও সে বের হতে পারেনি। কারণ মেইন দরজায় তালা লাগানো ছিল।" তিনি আরও দাবি করে বলেন, "আমাদের দাবি, কে বা কারা তালা লাগালো তা তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হোক।
স্বজনদের অপেক্ষার পালা শেষে সোমবার, (২০ অক্টোবর) সকাল ৫ টার সময় খালিদ হাসান সাব্বিরের মরদেহ তাঁর নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সকাল ১১ টার সময় মাদ্রাসা মাঠে স জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। এই অকালমৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মাত্র ২৯ বছর বয়সী খালিদ তাঁর এলাকায় ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। বরগুনায় তিনি শিশু কিশোর সংগঠন 'খেলাঘর'-এর একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি 'বিডিক্লিন বরগুনা জেলা'-এর একজন সদস্য হিসেবে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা ও জনসচেতনতামূলক অসংখ্য সামাজিক কাজে নিয়োজিত ছিল।