পার্বত্যাঞ্চলে রাঙামাটির পাহাড়ি ঢালে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জাম্বুরা ফলন হয়েছে। পাহাড়ের উর্বর মাটি, অনুকূল আবহাওয়া আর পরিশ্রমী চাষিদের যত্নে গাছ ভরপুর ফল দিয়েছে। অথচ মৌসুমের শেষে তাদের মুখে আনন্দ নয়, হতাশার ছাপ। কারণ, বাজারে দাম নেই জাম্বুরার-চাষিরা বিক্রি করেও লাভবান হচ্ছেন না বরং লোকসান গুনছেন।
চাষি আলো জ্যোতি চাকমা লংগদু উপজেলার খাড়িকাটা গ্রাম থেকে দুই নৌকা ভর্তি জাম্বুরা নিয়ে বিক্রি করতে বাজারে এসেছেন। তিনি বলেন, “ফলন ভালো হয়েছে, কিন্তু দাম নেই। প্রতি পিসে পাচ্ছি মাত্র ৫ থেকে ১০ টাকা। গত বছর বিক্রি করেছি ৩০ টাকায়। নৌকা ভাড়াও উঠছে না।”
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১ হাজার ১শ ৭৫ হেক্টর জমিতে জাম্বুরার আবাদ হয়েছে। ফলনের পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার টন। কিন্তু দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংরক্ষণ সুবিধার অভাব ও পাইকারি বাজারের অপ্রতুলতা চাষিদের ন্যায্য মূল্য পেতে বাধা দিচ্ছে।
স্থানীয় কয়েকটি বাজার ও সাপ্তাহিক হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ৭-৮ গাড়ি জাম্বুরা যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীতে। স্থানীয় পাইকার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পাহাড়ের জাম্বুরা গুণে-মাপে ভালো। তবে পরিবহন খরচ, টোল আর শুল্ক মিলে লাভ থাকে সামান্যই। তবু চাহিদা আছে, তাই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
পাইকার নুরুল ইসলাম জানান, এ বছর তুলনামূলক সস্তায় জাম্বুরা কিনতে পারছি, কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তেলের দাম, ট্রাক ভাড়া, বাজার খরচ-সবকিছু যোগ করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, “জাম্বুরা গাছ পাহাড়ের পরিবেশে খুব মানানসই। কিন্তু অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও সাপ্লাই চেইন দুর্বলতার কারণে চাষিরা লাভবান হতে পারেন না। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে সংগ্রহ ও বিপণন কেন্দ্র স্থাপন হলে চাষিরা ন্যায্য দাম পেতেন।”
কৃষি উদ্যোক্তারা মনে করছেন, পাহাড়ি জাম্বুরার স্বাদ, গন্ধ ও রসালত্ব একে একটি সম্ভাবনাময় ব্র্যান্ডে পরিণত করতে পারে। তবে এর জন্য দরকার সংরক্ষণাগার, সহজ পরিবহন ব্যবস্থা, ব্র্যান্ডিং ও অনলাইন বিপণনের উদ্যোগ। তবেই কৃষি ফলনে ন্যায্যা মূল্য পাবে।