কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) একাংশের জনসভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনকে অশালীন ভাষায় সম্মোধন করে বক্তব্য দিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন। এছাড়াও তিনি জনসভায় স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও বিষেদাগার করেছেন।
৩৬ মিনিটের ওই বক্তব্যর ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকরা রাতে ঝাড়ু মিছিল করেছে। এ সময় জাতীয় যুব সংহতির পৌর কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
এরপর থেকে আহসান হাবিব লিংকনের বাড়ির সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার এমন আচরণকে অসৌজন্যমূলক ও শিষ্টাচার বর্হিভূত বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ জনগণ।
জানা গেছে, মঙ্গলবার ( ২১ অক্টোবর) বিকেলে মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের আমলা বাজারে জনসভার আয়োজন করে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) স্থানীয় নেতাকর্মীরা। আমলা ইউনিয়ন সভাপতি বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনটির মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন।
তার দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৩২ মিনিট পর শেষের দিকে আহসান হাবিব লিংকন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিনের নাম ধরে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। এরপরেই তিনি বলেন,"মাদার গাছে বেশি ঘষবেন না। আপনি তারেক রহমানের কাছে সেলিমা রহমানের মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমি নাকি ২০১৮ সালে ভোট বিক্রি করে দিয়েছি। এ সময় ফরিদা ইয়াসমীনকে অশালীন ভাষায় সম্বোধন করে লিংকন বলেন,আমি যদি ভোট বিক্রি করে দেই তাহলে সর্বোচ্চ ভোট পেলাম কিভাবে?"
সভায় জাতীয় পার্টির এই নেতা যেসব আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা বা ওয়ারেন্ট নেই তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে হুশিয়ারী দেন। তিনি সংসদে যেতে পারলে তারেক রহমানকে বলে আওয়ামী লীগের ভালো নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা করে তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়ার আহব্বান জানাবেন বলে জানান।
এদিকে অশালীন সম্বোধনের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার রাতে ভেড়ামারা শহরে মটরসাইকেল নিয়ে ঝাড়ু মিছিল করেছে ফরিদা ইয়াসমিনের সমর্থকরা। তারা আহসান হাবিব লিংকনের অফিস ও বাড়ির সামনে গিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। এরপরেই লিংকনের বাড়ির সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা যায়। এ ঘটনায় রাতে জাতীয় যুব সংহতি ভেড়ামারা পৌর শাখার কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।
কার্যালয়টি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন বিশ্বাস বলেন, ফরিদা ইয়াসমিনের সন্ত্রাসী বাহিনী যুব সংহতির অফিস ভাঙচুর করেছে। প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিবের অশালীন বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, একটা পার্টির মহাসচিব তিনি শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য দিয়েছেন যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি বিষয়টি কেন্দ্রীয় এবং জেলার নেতাদের জানিয়েছি। আমি মানহানির মামলা করতে চাই। তিনি মিথ্যাচার করেছেন।
ফরিদা আরো বলেন, রাতে শুনেছি বিএনপির নেতা কর্মীরা ঝাড়- মিছিল করেছে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ওই বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা সেটা দেখেছি। আহসান হাবিব লিংকন বিএনপির কেউ নন। তিনি বিএনপির নেতা-নেত্রীদের নিয়ে এমন কথা বলতে পারেন না। এ বিষয়ে দল থেকে যতটুকু করার তা করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জানার জন্য ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদারের মুঠোফোনে বারবার কল দিলে তিনি কেটে দেন।
আহসান হাবিব লিংকন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কুষ্টিয়া জেলার সভাপতি ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির হয়ে ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে বিশ দলীয় জোটের শরিক কাজী জাফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন আহসান হাবীব লিংকন। এবারও তিনি জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। অপরদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা ইয়াসমিন একই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের দুইজনের বাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায়।