দিঘলিয়ায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তদন্তের ৩ দিন বাকি

এফএনএস (সৈয়দ জাহিদুজ্জামান; দিঘলিয়া, খুলনা) : | প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম
দিঘলিয়ায় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় তদন্তের ৩ দিন বাকি

দিঘলিয়া উপজেলায় স্টার জুট মিলের নিরাপত্তা প্রহরী কর্তৃক জনৈক ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় সম্পৃক্ত জহিরুল ইসলাম সুমনকে (৩৫) সাময়িক বরখাস্ত করেছেন মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম আজাদ। 

উল্লেখ্য গত ২২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭ টায় দিঘলিয়া উপজেলার স্টার জুট মিলের নিরাপত্তা প্রহরী জহিরুল ইসলাম জনৈক ৭ম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটিকে শ্রমিক কোয়ার্টারের জি ব্লকের নীচ তলায় সিঁড়িঘরে মটরের সুইচ অফ করতে বলে সেখান থেকে ঝাপটে ধরে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করলে ছাত্রী জোরে চিৎকার দেয়। এ সময় ধর্ষণ চেষ্টাকারী জহুরুল ইসলাম সুমন তাকে ছেড়ে দেয় এবং এ ঘটনা কাউকে জানাতে নিষেধ করে। জানালে তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ছাত্রী এরপর স্বাভাবিক হয়ে বাসায় গিয়ে সকল ঘটনা তার মাকে জানায়। তার মা তার পিতাকে জানায়। পরবর্তীতে ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সব কিছু রেকর্ড করে নিয়ে যায়। ছাত্রীর পিতা-মাতার পক্ষ থেকে প্রকল্প প্রধানকে ঘটনা জানলে প্রকল্প প্রধান তৎক্ষনাৎ জহিরুলকে লোক পাঠিয়ে ডেকে আনান।এ ব্যাপারে ঘটনার ব্যাপারে জহিরুলকে জিজ্ঞাসা করলে সে অস্বীকার করে। তাকে ছাত্রীর গায়ে হাত দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে প্রকল্প প্রধানকে জানায়, সুইজ দিতে গিয়ে তাকে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট করার পর তাকে ছাড়িয়ে গা টিপে দিয়েছে। যা পরবর্তীকালে অস্বীকার করেছে বলে প্রকল্প প্রধান এ প্রতিবেদককে জানান। 

এ ঘটনায় মিল কর্তৃপক্ষ জহুরুলকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। হয়তো স্থায়ী বরখাস্ত হতে পারে। তাও সুদূর পরাহত। তহলে একজন উদীয়মান ছাত্রীর শ্লীলতাহানির বিচার করবে কে? 

সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত জহিরুল এবং ছাত্রীর পিতা উভয়ই একই মিলের নিরাপত্তা প্রহরী সেকারণে ছাত্রীর পিতা মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম আজাদ এর নিকট ঘটনার বিবরণসহ সঠিক বিচারের দাবী করে আবেদন জমা দিয়েছে। অপরাধী জহিরুলকে শোকজ করা হয়েছিল। সে নিজেকে নির্দোষ ও এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে জানিয়েছে।  প্রকল্প প্রধান প্রথমে ৩ সদস্য পরে একজন সদস্য বাড়িয়ে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির আহবায়ক মুস্তাফিজুর রহমান ব্যবস্থাপক পাট এবং সদস্য যাথাক্রমে আডমিন অফিসার আব্দুল জলিল, সিকিউরিটি অফিসার প্রসান্ত কুমার রায় ও সহকারী উৎপাদন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আলী শেখ । এ তদন্ত কমিটি দ্বিতীয় মেয়াদে(১০কার্মদিবস) তদন্ত করছে। তদন্তে মোট ১৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। আগামী রোববার (২৬ অক্টোবর) তদন্ত রিপোর্ট প্রকল্প প্রধানের নিকট জমা দিবেন। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে মিলের প্রকল্প প্রধান আবুল কালাম আজাদ ব্যবস্থা নিবেন। প্রকল্প প্রধানের কাছে সাংবাদিকেরা তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ঘটনা আমি শোনা মাত্রই জহিরুলকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং লিখিত অভিযোগ পেয়ে জহিরুলকে সাময়িক বরখাস্ত করি। তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে জহিরুল ইসলাম সুমন বলেছিলো পানির মোটরের সুইচ থেকে মেয়েটি বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হলে আমি তাড়াতাড়ি তাকে ম্যাসাজ করি। কিন্তু সুমনের লিখিত জবাবে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। সেকারণে তদন্ত কমিটির কাছে আমি বিদ্যুৎ স্পৃষ্টের বিষয়ে প্রশ্ন করার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত কমিটির কাছে সুমন একথা অস্বীকার করেছে। আমি তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠাবো। রিপোর্টের ভিত্তিতে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ সুমনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করবে এবং উক্ত ঘটনা সত্য প্রমাণ হলে সুমনকে চাকুরী থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে। এ ব্যাপারে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নিরব দর্শকের ভূমিকায়। কারণ হিসেবে পুলিশ বার বার জানাচ্ছে ছাত্রীর পিতা লিখিত অভিযোগ করেনি। ভিকটিম যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাদেরও নেই কোনো ভূমিকা। এলাকার বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা একজন মানুষ হত্যার শিকার হলো। স্বজনরা অভিযোগ করলনা। তাহলে কি ঘাতক পার পেয়ে যাবে? অপরাধী ছুটছে ৬ লাখ টাকার মোটরসাইকেল নিয়ে আসলে তার কি কিছু হবে? জহিরুলের পুত্র ইশান আহম্মেদ ইফতির পক্ষ থেকে ছাত্রীর পিতা ও সাংবাদিককে হুংকার দিয়ে স্রেফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার পিতা এর আগেও এর চেয়ে বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করে পার পেয়ে গেছে। কেউ তার পিতার কিছুই করতে পারেনি। এবারও কিছু করতে পারবেনা। এদিকে একজন মিলের নিরাপত্তা প্রহরী হয়ে ৬ লাখ টাকার মোটরসাইকেল ব্যবহার, তার বেপরোয়া চলাফেরা, প্রিভিয়াস রেকর্ড, মিলের স্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ড সব কিছুই বিতর্কিত যা তদন্ত হলেই বেরিয়ে পড়বে থলের বেড়াল এমনটাই জানিয়েছেন এলাকার বিজ্ঞমহল। জনমনে প্রশ্ন বারবার অপরাধ করেও সুমন পার পেয়ে যায় এই অদৃশ্য শক্তির উৎস কোথায়? এদিকে পর্দার আড়ালে থেকে জনৈক ব্যক্তি অভয় দিয়ে বলেছেন, সাংবাদিকরা লিখে কাগজের পাতা ভরে ফেলুক তোর কিছু হবে না এমনটাই মানুষের মুখে মুখে। এদিকে তদন্ত শেষে সঠিক বিচার পাওয়ার আশায় দিন গুনছে ভুক্তভোগী পরিবারসহ মিলের অন্যান্য নিরাপত্তা প্রহরীসহ এলাকাবাসী।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে