ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ সংলগ্ন অপরিকল্পিত দুটি স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) নির্মানের ফলে দুরপাল্লার পরিবহন ও মালবোঝাই ট্রাকের ঝাকুনিতে ফাটল ধরা ব্রিজটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘটনাটি সড়ক পথে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র ব্যস্ততম ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল বাসষ্ট্যান্ডের। দ্রুত স্পিড ব্রেকার দুটি অপসারন করে আরো দূরত্বে তা নির্মানের দাবি করেছেন স্থানীয়রা। নতুবা ফাটল ধরা ব্রিজটি যেকোন সময় ধসে পরে বড়ধরনের দূর্ঘটনার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যেতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ। এমনটাই আশঙ্কা করছেন এ রুটে চলাচল করা একাধিক পরিবহন চালকরা।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যস্ততম এ মহাসড়কের বামরাইল বাসষ্ট্যান্ডের দীর্ঘবছরের পুরনো ব্রিজে গত এক সপ্তাহ পূর্বে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে করে ভারি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ন ঝুকিপূর্ন হয়ে পরেছে। মহাসড়কের বামরাইল বাসষ্ট্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ আগে ব্রিজের নিচের দক্ষিণ অংশে ফাটল দেখা দিলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সড়ক ও জনপদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দুইদিন ধরে কাজ করে ব্রিজের নিচের ফাটল অংশে বালুর বস্তা দিয়ে গার্ডার নির্মান করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ব্রিজটি বহু বছরের পুরানো। ব্রিজ সংলগ্ন দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বেশ কয়েকদিন পূর্বে যানবাহনের গতিকমাতে স্পিড ব্রেকার (গতিরোধক) নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু এ গতিরোধক সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ লাগোয় নির্মান করায় যানবাহন চলাচলের সময় পুরনো ব্রিজের ওপর আরো চাঁপ বেশি পরছে। তাছাড়া দ্রুতগতির অধিকাংশ যানবাহন স্পিড ব্রেকারে গতি না কমিয়েই বেপরোয়াগতিতে তারা ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে। স্থানীয়রা ধারনা করছেন, এ কারণেই ভারি যানবাহনের চাঁপে ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ রুটে চলাচল করা মোটরসাইকেল চালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন-ব্রিজের পাশ্ববর্তী এলাকায় কোন বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়েই সকল যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন-স্প্রিড ব্রেকার দুটি দ্রুত অপসারন করে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ থেকে আরো দুরত্বে নির্মান করা না হলে যেকোন সময় ফাটল ধরা ব্রিজ ধ্বসে বড়ধরনের দুর্ঘটনাসহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে সড়ক যোগাযোগ। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিত্বে স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা জানিয়েছেন-ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে পাঁচ টনের অধিক ভাড়ী যানবাহনকে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে দেয়া হলেও এ নিষেধাজ্ঞা কেউ মানছেন না। কারণ হিসেবে তারা বলেন-বিকল্প কোন সড়ক ব্যবস্থা না থাকায় দূরদুরান্ত থেকে আসা পন্যবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনকে বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেকারণে ব্রিজটি ক্রমেই আরো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জনকণ্ঠকে বলেন-ব্রিজে ফাটল ধরার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা জরুরি ভিত্তিতে ফাটল ধরা অংশের নিচে বালুর বস্তা দিয়ে গার্ডার নির্মান করে কিছুটা ঝুঁকি মুক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে পরবর্তী স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন-ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্রিজের দুইপাশে নির্মিত স্পিড ব্রেকারের কু-ফল সম্পর্কে বলেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বরিশাল সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহিন খান বলেন, ব্রিজের নিচের ফাটল অংশে বালুর বস্তা দিয়ে গার্ডার নির্মান করে বর্তমানে ফাটল ধরা ব্রিজটি ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকার নির্মানের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন-স্থানীয়দের জোরালো দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিজের দুইপাশে দুটি গতিরোধক নির্মান করা হয়েছিলো। এখন তারা (স্থানীয়রা) চাইলে তা অপসারন করা হবে।