জুলাই বিপ্লব '২০২৪ ছাত্র - জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত ভোলার দৌলতখানের শাজাহান শহিদ হওয়ার পাঁচ মাস পর তার স্ত্রী ফাতেহার সদ্য প্রসূত পুত্র সন্তানের সার্বিক দায়িত্ব নিলেন ভোলা জেলা প্রশাসক। শহিদ শাজাহানের গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ছোটধলী গ্রামে বক্তার বাড়ি। গত শুক্রবার ২৪ ডিসেম্বর বিকালে শহিদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগমের প্রচন্ড প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে ভোলা শহরের এশিয়া মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর ফাতেহা বেগম একটি সুন্দর ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম দেন । ফাতেহা বেগম সদ্য প্রসূত পুত্র সন্তান বুকে জড়িয়ে নিলেও সন্তানের ভবিষ্যতের চিন্তায় সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। স্বামীর শোকে মলিন মুখ। পরিবারে নেমে আসে আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া। ফাতেহার বড় বোন ফাতেমা জানায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের গণঅভুত্থানের আগে শাজাহান চার মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী ফাতেহাকে মেডিকেল টেস্টের জন্য ঢাকা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। অন্তঃসত্ত্বা ফাতেহা বেগম চিকিৎসকের মাধ্যমে জানতে পারেন তার গর্ভে পুত্র সন্তান জন্ম নেবে। ডাক্তারের এমন খুশির সংবাদে শাজাহান আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। স্বামী - স্ত্রী দুইজনে মিলে ঠিক করলেন গর্ভে আসা পুত্র সন্তানের নাম রাখা হবে মো. ওমর ফারুক। শহিদ শাজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগমের পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর ভোলা শহর ও তার গ্রামের বাড়ি দৌলতখানে ছড়িয়ে পড়ে। আনন্দ উচ্ছ্বাসে আত্মীয়-স্বজনরা উল্লাস করলেও স্ত্রী ফাতেহা বেগম স্বামী শাজাহানের স্মৃতি স্মরণে দু'চোখের পানি ফেলে কেঁদে ওঠেন। ফাতেহা জানান, আমার গর্ভে পুত্র সন্তান জন্ম নেবে জেনেও আমার স্বামী ফ্যাসিবাদী সরকার হাসিনা’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আমার স্বামী আমার গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেনি। শনিবার ২৫ ডিসেম্বর শহিদ শাজাহানের স্ত্রী ফাতেহার জন্ম নেয়া নবজাতক পুত্র সন্তানের খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন ভোলা জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান । জেলা প্রশাসক সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পুত্র সন্তানকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মিষ্টি, ফলের ঝুড়ি, শীতের পোশাক, কম্বল ও নগদ ১৫ হাজার টাকা উপহার দেন প্রসূতি ফাতেমার হাতে। এছাড়া অসুধ, হাসপাতালের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ বহন করার পাশাপাশি অভিভাবক হিসেবে শিশুর পাশে থাকারও কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
ফাতেহার মা নবীশা জানায়, শাজাহান ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে ফেরি করে পাপস বিক্রি করতেন। কামরাঙ্গীরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয় শাজাহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে শাজাহানের নাকের ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে নিহত হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার আগেই সে মারা যায়। পুলিশ পরিবারের কাছে তার লাশ না দিয়ে গোরস্থানে তাকে দাফন করে। ফাতেমা বেগমের কোলে জন্ম নেওয়া নবজাতক কে দেখতে বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়ক ও সমন্বয়কদের প্রতিনিধিরা ও ছুটে আসেন হাসপাতালে। তারা ও শহিদ শাজাহানের পরিবারের খোঁজখবর নেন। সব সময় অসহায় এ পরিবারের পাশে আছেন এবং থাকবেন বলে ফাতেমা বেগমকে আশ্বস্ত করেন। এর আগেও জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান শহিদ শাজাহানের স্ত্রী ফাতেহা বেগমের অন্তঃসত্তার খবর শুনে তাকে দেখতে ছোটধলী তার গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ওই সময় দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিয়তি রাণী কৈরী, প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ, জেলা ও দৌলতখান উপজেলার সমন্বয়ক ও সমন্বয়কদের প্রতিনিধিদিরা তার সাথে ছিলেন। জেলা প্রশাসক শাহজাহানের গ্রামের বাড়ি গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমার হাতে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ফাতেহা নবজাতক পুত্র সন্তান নিয়ে দৌলতখানে তার গ্রামের বাড়ি ফিরে এসে আমার দেশ কে জানান, আমার স্বামী দেশের জন্য শহিদ হয়েছে কিন্তু পুত্রসন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেনি। আমার দাবি আমি আমার পুত্র সন্তানের ভালো মন্দের সব সময় সরকারকে পাশে দেখতে চাই। সন্তানের সহযোগিতায় সরকারকে পাশে পেতে চাই। মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন। ভালো আছেন।