শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে গোমস্তাপুরে পোসালু উৎসব

এফএনএস (মোঃ আল মামুন বিশ্বাস; গোমস্তাপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : | প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম
শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে গোমস্তাপুরে পোসালু উৎসব

শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটাতে স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের উদ্যোগে পোসালু উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুনর্ভবা নদী ঘেঁসা রহনপুর পৌর এলাকার বাবুরঘোন মহল্লার ওই শিক্ষিকার বাড়িতে চলে এই আয়োজন। ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এতে অংশ নেন। উৎসবের দিন নানা আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিশুসহ গ্রামের নারীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে। শিশু শিক্ষার্থীরা গানের তালে নৃত্য, গান, কবিতা,নাটক, গম্ভীরা পরিবেশন করে। এতে তারা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে গ্রামের নারীরা পোসালু উৎসবের রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত। তারা কেউ কেউ গল্পের তালে পোসালুর সিদ্ধ ডিম থেকে খোসা ছড়াচ্ছে । আবার কেউ ভাত রান্না করছে। রান্না শেষে নারীরা হারিয়ে যাওয়ায় খেলাধুলায় অংশ নিয়েছে। দুপুরে সকলে একসঙ্গে সারিবদ্ধ হয়ে বসে খাবার খেয়েছেন। উত্তর রহনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মমতাজ বেগম এসবের আয়োজন করে। শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়ায় সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে তার এ প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে তাদের মেধার মনোনিবেশ ঘটানো।

অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছরের বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রিয় শিক্ষিকা মমতাম বেগম গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিগুলো তুলে ধরতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবার তিনি শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে পোসালু উৎসবের আয়োজন করে। তারা প্রাথমিক পর্যায়ের ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এতে অংশ নিচ্ছেন। ম্যাডামের পক্ষে একাই আয়োজন করা সম্ভব হবেনা তাই অংশগ্রহণকারীরা ৫০ টাকা করে উঠিয়ে ম্যাডামকে দিয়েছি। মমতাজ ম্যাডামের আন্তরিকতা তাদের মুগ্ধ করছে। নতুন কিছু শিখতে ও জানতে পারলাম।

৫ম শ্রেণির ছাত্র নিরবসহ অন্য ছাত্ররা জানান, পোসালু কি তা আজ জানতে পারলাম। কিভাবে করতে হয় তা দেখলেন ও জানলেন। খেলাধুলার পাশাপাশি নাচ, গান, নাটিকাতে অংশ নিয়েছি। নানা-দাদাতের আমলে তারা কি করতেন সেটা আজ উপলদ্ধি করলাম।

জেলা সদর থেকে আসা সাজিদ তৌহিদ জানান, পরিবার নিয়ে এই আয়োজন অংশ নিয়েছি। বউ ও ছেলে বেশ খুশি। ছেলে মমতাজ আপার বাড়ির উঠানে ধান রাখার কুটি প্রথম দেখল সে। এছাড়া তার বাড়িতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া জিনিষ পত্র রেখেছেন। পুরণো আমলের সংস্কৃতিগুলো নতুনদের সামনে তুলে ধরছেন এটা প্রশংসার দাবি রাখে তিনি। এখানে এসে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো ভেসে আসছে। 

রহনপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হাবিবা সাত্তার জানান, এসব আয়োজন শিশু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধার বিকাশ ঘটাবে। শিশুরা হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি জানতে পারছে,  কিভাবে হতো সেটা আবার জানতে পারছে। তাদের মধ্যে মনোবিকাশ ঘটছে। এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে বেশ ভাল লাগছে। মমতাজ বেগম গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নতুনদের কাছে তুলে ধরছেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আয়োজনে।

এ বিষয়ে শিক্ষিকা মমতাজ বেগম বলেন, গ্রামীণ সংস্কৃতি অনেকটা বিলুপ্তির দিকে। এসব নতুন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করেন। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য তুলে ধরতে তিনি পোসালু উৎসব করেছেন। গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা তাকে এ উৎসবে সহায়তা করেছেন বলে তিনি জানান।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে