পশুপাখি বা জীবজন্তু দেখার জন্য মানুষের আগ্রহ থাকে, তাই চিড়িয়াখানায় যায় বিনোদনের জন্য। নানা ধরনের পশুপাখি দেখে, তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ দেখে শিক্ষা বা আনন্দ পাওয়ার জন্য। কিন্তু ঢাকার জাতীয় চিড়িয়াখানাসহ দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় গিয়ে পশুদের দুরবস্থা দেখে মানুষকে কষ্ট পেতে হয়। মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতে হয়। জানা গেছে, বিভিন্ন প্রাণীর অবস্থাই শোচনীয়। প্রাণীদের শরীরে ঘা ও ক্ষত হয়ে গেছে, তাতে মাছি বসছে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে খাবার দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোন কোন শেডে খাবার দেয়াই হচ্ছে না। এসব অনিয়মের কারণে অর্ধাহারে, অনাহারে, রোগেশোকে ভুগে ভুগে প্রাণীগুলো অকালেই মারা যায়। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে আবারও বিভিন্ন প্রাণী কিনে আনা হয়। আবারও অযত্নে-অনিয়মে এদের মৃত্যু হয়। প্রাণী অধিকারকর্মীদের মতে, এগুলো বন্য প্রাণীর সঙ্গে নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নয়। অন্যদিকে দেখা গেছে প্রাণীদের নিসঙ্গতা। সঙ্গী ছাড়া থাকার ফলে পরিবর্তন আসছে প্রাণীগুলোর জীবনাচরণে। প্রাণীকে সঙ্গীহীন রাখা হলে তারা একঘেয়েমি ও বিষণ্নতায় ভোগে। হয় খাবারের প্রতি আসক্তি কমে যায় অথবা তা বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়। যার ফলে প্রাণী ক্ষীণ বা স্থুলও হয়ে যায়। দুই ক্ষেত্রেই প্রাণীর আয়ু কমে আসে। বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন, ২০২৩-এ উল্লেখ রয়েছে, চিড়িয়াখানাতে কোনও নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনও অবস্থাতেই কেবল একই প্রজাতির, একই লিঙ্গের একটি প্রাণী রাখা যাইবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো দেশের সবগুলো চিড়িয়াখানার চিত্রই এক। চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলোকে সঙ্গীহীভাবেই রাখা হয়েছে। একটি দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানার চারদিকে অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। বাঘ-সিংহ, ভল্লুকসহ বেশিরভাগ প্রাণী দুর্বল ও রোগাক্রান্ত। খাঁচার তুলনায় পশুপাখি বা প্রাণীদের সংখ্যা খুবই কম। একসময় বহু খাঁচায় পশুপাখিতে ভরপুর থাকলেও সেগুলো এখন ফাঁকা। খাঁচার ভেতরের অবস্থাও খুবই করুণ। ময়লা ও শ্যাওলা জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে অধিকাংশ খাঁচা। কচ্ছপ ও কুমিরের খাঁচার ভেতরে কয়েক স্তরের ময়লা-ধুলোবালি ও শ্যাওলা জমে আছে। দীর্ঘ সময় পানিতে অবস্থানকারী বক বা গাংচিলের খাঁচায় নেই পর্যাপ্ত পানি। মাংসাশী প্রাণীদের খাঁচায় ছোট ছোট মাংসের টুকরো দেখা গেলেও সেগুলো বালুর স্তূপে পড়ে থাকে। আমরা চাই না চিড়িয়াখানাটির কোনো প্রাণী মারা যাক বা অযত্নে থাকুক। আমরা আশা করব, দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নিয়ে চিড়িয়াখানাটির পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে।