পদ্মার চরে গুলিতে জোড়া খুনের আসামিদের ফাঁসির দাবি করেন পরিবার। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর বাজারে মানববন্ধনে গুলিতে নিহত নাজমুল ও আমান হত্যার আসামিদের ফাঁসির দাবি করেন এই দুই পরিবার। বাঘা উপজেলার খানপুর গ্রামের নিহত নাজমুল হোসেন ও আমান মন্ডল এবং আহত রাকিব হোসেন ও মুনতাজ মন্ডলের ছবি সংবলিত ব্যানারের ডানে হত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে বাহিনী প্রধান কাকনসহ উজ্জল সরদার, রায়হান আলী, সাগর আলী, রমজান হোসেন, উজির উদ্দিন ও রফিকুল ইসলামের ছবি দিয়ে গ্রেফতার করে ফাঁসি দাবি করা হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন-স্থানীয় চান মন্ডল, সাহাবুল হোসেন, নিহত নাজমুলের মা নারগিস আরা বেগম, আহত মুনতাজের মা আনজেরা বেগম, বোন বিনারা বেগম, নিহত আমান মন্ডলের মা খনজনা বেগম, বোন মেহেরনিকা বেগম, স্থানীয় আবদুস সালাম, আমজাদ হোসেন, কৃষক ছেত্তাজ মন্ডল, নিহত নাজমুলের বাবা মিনহাজ মন্ডল, স্ত্রী শারমিন বেগম প্রমুখ। পদ্মার চরে খড় কাটাকে কেন্দ্র করে ২৭ অক্টোবর গোলাগুলির ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খানপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, পদ্মার চরে শুধু কাকন না, এখানে টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, পান্না, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনী রয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। এসব বাহিনী চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে। এ ঘটনায় খানপুর গ্রামের নিহত আমান মন্ডলের পিতা মিনহাজ মন্ডল বাদি হয়ে ২৯ অক্টোবর দৌলতপুর থানায় কাকন বাহির প্রধান কাকনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। এছাড়া উজ্জল সরদার, রায়হান আলী, সাগর আলী, রমজান হোসেন, উজির উদ্দিন ও রফিকুল ইসলাম সহ ২৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। নিহত আমান মন্ডলের পিতা মিনহাজ মন্ডল বলেন, ২০ বছর আগে পান্না ও লালচাঁদ বাহিনী গড়ে উঠেছিল। তাদের ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন। এই ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে। ১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রী অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি নিজস্ব বাহিনী গঠন করেন। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মন্ডলপাড়ার রাজু আহমেদ নামের এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। সাঈদ মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়ার ভাদু মন্ডলের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালে লালচাঁদ বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই সুখচাঁদ দায়িত্ব নেন। তাঁরা ফিলিপনগরের বাসিন্দা। লালচাঁদের ছেলে রুবেল বাহিনী সক্রিয় রয়েছেন। ‘রাখি বাহিনী’র প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়া রয়েছে কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী। বাঘা থানার ওসি আফম আছাদুজ্জামান বলেন, পদ্মার চরে সন্ত্রাসী বাহিনীকে নির্মূল করারি জন্য অভিযান অব্যাহ রয়েছে।