গাইবান্ধায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

এফএনএস (মোঃ শামিম উল হক শাহিন; গাইবান্ধা) : | প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:২৪ পিএম
গাইবান্ধায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

গাইবান্ধা সদর উপজেলার নুরুল হক মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অর্থ আত্মসাৎ, নিয়োগ বাণিজ্য, সম্পদ লুটপাট, নারী কেলেঙ্কারি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা বর্হিভূত কর্মকাণ্ডের একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। এসব গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও সচেতন নাগরিকেরা। অভিযোগের কপি পাওয়ার পর দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলাম ২০১০ সালে নুরুল হক মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের আগে দাড়িয়াপুর আমান উল্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থাকাকালে নারী ঘটিত অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। অভিযোগ মতে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিপুল অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে তিনি তৎকালীন নীতিমালা লঙ্ঘন করে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন।

অভিযোগপত্রে সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য ও বিদ্যালয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের ঘটনা। লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এছাড়া বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জমি, দোকান ও মার্কেট থেকে আয়কৃত অর্থ তিনি আত্মসাৎ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনের ছাদ ভেঙে রড ও নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করেও প্রায় কয়েক লাখ টাকা লোপাট করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার কারণে সহকারী শিক্ষিকা মোছা: মনিরা খাতুনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন, যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষিকা কাজী নিশাত পারভীন এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাকে বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জোরপূর্বক অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর নিতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে যে, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এর বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছেন। তবে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি শাস্তির আওতা থেকে বেচে যান।

প্রধান শিক্ষকের এসব দায়িত্বহীনতা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তার দায়িত্বহীনতার ফলে ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল "ভয়াবহভাবে নিম্নগামী" হয়েছে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিদ্যালয়টি এখন অনিয়ম, প্রভাব ও আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সচেতন মহল দ্রুত এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যাতে শিক্ষাঙ্গন দুর্নীতি ও অনৈতিকতার আখড়া না হয়।

রংপুর আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গাইবান্ধার নুরুল হক মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাখিল করা অভিযোগ কপি তারা পেয়েছেন। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে শিগগিরই একটি তদন্ত টিম গঠন করে ঘটনাটির নিরপেক্ষ যাচাই-বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলামের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তার মতামত পাওয়া যায়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে