রাজশাহীর তানোরে দু’দিনের ভারীবর্ষণে তলিয়ে গেছে গ্রামিণ রাস্তাঘাট, ডুবেছে আমন ধানের আধাপাকা ক্ষেত। আর ভেসে গেছে পুকুর ভরা মাছ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এঅঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। বুধবার দিবাগত রাত ও শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত টানা ভারিবর্ষণে এপরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ঘরবন্দী হয়ে পড়ে সব শ্রেণি পেশার মানুষ। অপরদিকে এই দু’দিন বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই নেট সার্ভিস বন্ধ থাকায় মানুষকে মহাবিপদে পড়ে হয়। শনিবার সন্ধ্যায় এরির্পোট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ও নেট সার্ভিসের দেখা মেলেনি। যার ফলে এ দু’দিন ধরে অন্ধকারে বাস করছে তানোরবাসি। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে উজান থেকে আসা পানির ঢলে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও পুকুর খালে বিলে পানি ঢুকে পড়েছে। তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া, কামারগাঁ, পাঁচন্দর ও কলমা ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় আমন পাঁকা ধান ডুবে গেছে, ডুবতেই আছে। সেই সাথে শতশত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ার পাশাপাশি উপড়ে পড়েছে খুটি। ফলে বিদ্যুৎহীন রয়েছে তানোর। এতে হতাশায় কপালে ভাঁজ পড়েছে সব শ্রেণি পেশার মানুষের। কৃষকরা জানান, সোনালী রঙে পাক ধরা মাঠজুড়ে একরের পর একর রোপা আমন ধান হঠাৎ দুই দিনের ঝোড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মাজা ভেঙে জমিতে পড়ে রয়েছে। তালন্দ ইউনিয়নের কালনা গ্রামের কৃষক হান্নান, তোফাজ্জল, বাদল, হাসান আলী বলেন, দুই দিনের ঝোড়ো হাওয়া ও ভারীবৃষ্টিপাতে তাদের মাঠের সবার ধান মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাসন করা নাহলে ধানের চরম ক্ষতি হবে। তানোর পৌর এলাকার ধানতৈর গ্রামের নিষান বলেন, আমন ধানের জমিতে যে পরিমাণ পানি ঢ়ুকে আছে তাতে দ্রুত নিষ্কাসন নাহলে ধানে গাছ গজিয়ে উঠবে। এতে করে কৃষকরা চরম ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে। শুধু তাই নয়, উজান থেকে নামতেই আছে পানির স্রোত। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই থইথই করছে পানি। প্রতিটি ব্রিজের মুখ দিয়ে নামতেই আছে স্রোতের পানি। খোজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর রোপা আমন রোপণের সময় থেকে প্রচুর বৃষ্টির পানির দেখা ছিল। আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র আশ্বিন মাসেও এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, যা অন্যকোন বছর দেখা যায়নি। এখনো মাঝেমধ্যে অব্যাহত রয়েছে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির দেখা। কৃষকরা বলেন, শনিবার সকালে বৃষ্টি থামলেও আকাশে প্রচণ্ড মেঘ। হয়তো রাত থেকেই আবার শুরু হবে পানি। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বছরের মধ্যে এত পরিমাণ বৃষ্টি হয়নি। নিচের জমিগুলো ডুবে গেছে। রোপা আমনের মারাত্মক ক্ষতিসাধন হবে যা আমাদের সর্বনাশ ডেকে নিয়ে আসবে। শুধু রোপা আমনের ক্ষতি নয়, পুকুরের মাছ বের হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। টানা বৃষ্টির কারণে সবজি খেত ও আলুর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ব্লকের ৩০ হেক্টর, মাদারিপুর ৮ হেক্টর, ছাঐড় ১৪ হেক্টর, কৃষ্ণপুর ৫ হেক্টর ও পাঁচন্দর ব্লকের মোহাম্মদপুর ৭ হেক্টর, চাঁদপুর ১০ হেক্টর এবং চান্দুড়িয়া ব্লকের ১৫ হেক্টর ও সিলিমপুর ৫ হেক্টর। তানোর পৌরসভায় ১১০ হেক্টর। সব মিলে ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান ডুবেছে এর মধ্যে আংশিক ১৫৭ হেক্টর ও পুরোপুরি ডুবেছে ৪৬ হেক্টর। তবে, উপজেলার কলমা ইউপির আজিজপুর, চন্দনকোঠা, কুজিশহর সহ ওই ইউপির ধান ডুবার কোন তথ্য দিতে পারেনি কৃষি অফিস। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, উপজেলায় রোপা আমনের চাষাবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে। তবে, ধান ডুবেছে পুরোপুরি ভাবে ৪৬ হেক্টর এবং আংশিক ডুবছে ১৫৭ হেক্টর জমি। অবশ্য বৃষ্টির পানি একেবারে থেমে গেলে এর সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে। যে সব জমি ডুবেছে এবং পানি ঢ়ুকেছে সেসব জমি থেকে তিন চার দিনের মধ্যে পানি বের হলে ধানের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় পার হলে ধানের ব্যাপাক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এই অফিসার। ই/তা