জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সহলাপাড়া গ্রামে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র কাফি খন্দকার হত্যা আলোচিত আসামি আবুল হোসেনকে জনতা হাতে আটকের পর কাফির বাবার হস্তক্ষেপে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নিহত কাফি খন্দকার (৮) সহলাপাড়া গ্রামের ইকবাল হোসেন সঞ্চয় খন্দকার ও উম্মে কুলসুমের একমাত্র সন্তান। সে নশিপুর দৌলতগাজী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন
জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল নিজ গ্রাম থেকে নিখোঁজের নয় দিন পর ২৬ এপ্রিল সহলাপাড়া গ্রামের পরিত্যক্ত পুকুরের কচুরিপানার নিচ থেকে কাফির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিন নিহত কাফির বাবা ইকবাল হোসেন সঞ্জয় গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিলাপ করতে করতে সন্দেহভাজন ওই গ্রামের চারজন আলোম হোসেন, কলম, আবুল হোসেন ও সবুরের নাম বলেন ওই বক্তব্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাদের নাম প্রচারিত হয়। ওইদিন থেকে তারা পলাতক রয়েছে। কাফির বাবা বাদীহয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বর্তমান মামলাটি জেলা গয়েন্দা শাখায় তদন্তাধীন রয়েছে। তারা এযাবৎ মোট নয়জন আসামি কে সন্দেহ ভাজন গ্রেপ্তার করা হলেও আটজন জামিনে মুক্তি পেয়েছে, সুজন নামে এক ব্যক্তি এখনও আটক রয়েছে।
শিশু কাফির মরদেহ উদ্ধারের দিনই তার বাবা সঞ্চয় খন্দকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, আমার ছেলের খুনি আবুল, আলম, কলম, সবুর তার সঙ্গে আরও পাঁচ থেকে সাতজন জড়িত।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত আবুল হোসেন আত্মগোপনে ছিলেন। মঙ্গলবার ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যার আগে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার দাইয়ুমপুর এলাকায় জনতার হাতে আটক হয়। গণধোলাই চলাকালে কাফির বাবা সঞ্চয় খন্দকার ঘটনাস্থলে পৌঁছে আবুলকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। পরে আবুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভাড়ার জন্য নগদ টাকা দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে গত ৩১ অক্টোবর শুক্রবার সহলাপাড়া গ্রামে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে অভিযুক্ত আবুল হোসেনকে বাড়িতে পাওয়া যায়। তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার সঙ্গে কিছুতেই জড়িত নই। সঞ্জয় আমার নাম বলার পর থেকে পালিয়ে ছিলাম। তখন আমার স্ত্রী ও ছেলে বিএনপির নেত্রী রেখার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, পুলিশ আপনাকে ধরবে না, মামলা থেকেও অব্যাহতি মিলবে। এজন্য দেড় লাখ টাকা খরচ করতে হবে। পরে তার সাথে ৮০ হাজার টাকা রফাদফা হয়। আমি তাকে ৬৫ হাজার টাকা দেয়। সে বাকী ১৫ হাজার টাকার জন্য এখনও বারবার ফোন দেয়। আবুলের এই বক্তব্যের ভিডিও কল রেকর্ড প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
জনতার হাতে আটকের সময় উপস্থিত থাকা স্থানীয় বাসিন্দা খন্দকার এলিন বলেন, কাফি হত্যার ঘটনায় কাফির বাবা নিজেই হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু পরে সেই নামের লোকদেরই রক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। জনতা আবুলকে চিনে ফেললে মারধর করে, পরে কাফির বাবা এসে তাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান।
কাফির বাবা ইকবাল হোসেন সঞ্জয় খন্দকার বলেন, আবুল হোসেনের উপর আমার সন্দেহ ছিল। কিন্তু এ মামলার তদন্তে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার কোন সম্পৃক্ততা পায়নি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তারাই এখন মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অভিযুক্ত আবুল হোসেনকে আপনি জিম্মায় নিয়ে মুক্তি দিলেন কেন? এই প্রশ্নে জবাবে তিনি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জেলা মহিলা দলের সহ সভাপতি নেত্রী রেখা বেগমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, কে এসব বলেছে, প্রমাণসহ আসবেন। না হলে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করব।