পানি কমলেও ভাঙ্গে বাড়লেও ভাঙ্গে, ভাঙ্গন পিছু ছাড়ে না। থাবা দেয় ব্রহ্মপুত্র ভাঙ্গে বসতবাড়ি চোখের পানি ফেলে হাজারো মানুষ। বছরে পর বছর বেড়েই চলছে ভাঙ্গন, দিনে দিনে কমে আসছে ব্রহ্মপুত্রের গভীরতা। গভীরতা কমলেও পরিধি বাড়ছে প্রস্থে। প্রস্থে ব্রহ্মপুত্র বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে এখন সর্বশান্ত। সূত্রমতে উজানে অপরিকল্পিত বাঁধ, নেই পরিকল্পনা মোতাবেক ড্রেজিং, নদীর সঙ্গে যুক্ত খাল-বিল-জলাধারগুলো ভরাট, নিষ্কাশন পথ বন্ধ করার কারণে দেশের নদ-নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এতে অতিরিক্ত পলি জমে বিভিন্ন নদীর মতো ব্রহ্মপুত্রের কমছে গভীরতা, বিপরীতে বাড়ছে প্রস্থ। স্বাভাবিক বর্ষাতেও সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা অপর দিকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে নদীর গতিপদ। ভয়াবহ রুপ নিয়েছে ভাঙ্গন। আর ভাঙ্গনে প্রতি বছর শতশত পরিবার গৃহহারা হয়ে পড়ছে, হচ্ছে নিঃস্ব। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে মানচিত্রে নদীর পরিধি বেড়েই চলছে।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের সাথে চিলমারী গ্রাস করছে তিস্তাও। বর্ষা ছাড়াও প্রায় সারা বছর দুই পাড় ভেঙ্গে প্রস্থে বাড়িয়ে নিচ্ছে ব্রহ্মপুত্র। তবে বর্ষা শুরু হলে ব্রহ্মপুত্র রাক্ষসী রুপ নেয় সাথে তিস্তায় হানা দেয়। ভাঙ্গনে প্রতি বছর গ্রাস করছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও গ্রামের পর গ্রাম। সুত্রমতে গত এক যুগে চিলমারী উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে প্রায় ১০ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এদিকে চলতি বছরেই ভাঙ্গনে প্রায় ১ হাজার পরিবার গৃহহারা হয়েছে। দিনে দিনে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ভাঙ্গন রোধে ডানতীর রক্ষা প্রকল্পে কাজ শুরু হলেও সঠিক পরিবল্পনার অভাব ও অনিয়মের কারনে প্রতি বছর দেখা দিচ্ছে ধস এছাড়াও বাকি অংশে রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় জোড়গাছসহ বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ও সাথে বিভিন্ন কারনে ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার ভাঙ্গন এবং নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়। ফলে ঐতিহাসিক চিলমারী নদীবন্দরের মতো অনেক কালের সাক্ষী মুছে গেছে। এছাড়াও চিলমারীর চরাঞ্চলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন ভুট্টাসহ প্রায় ৩০ প্রকার ফসল চাষ হলেও সেই চরসহ গ্রামগুলো রক্ষার জন্য সরকারী ভাবে নেই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫০ বছরে গভীরতা কমে, গ্রামগঞ্জ ও ফসলি জমি খেয়ে ব্রহ্মপুত্রের প্রস্থ বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। একই অবস্থা তিস্তারও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) হিসাবে, ২৫-৩০ বছরের মধ্যে পাঁচ ছয় কিলোমিটার প্রস্থের ব্রহ্মপুত্র হয়েছে প্রায় ৯ কিলোমিটার, তিস্তা বেড়েছে প্রায় এক কিলোমিটার। ফলে স্বাভাবিক বর্ষায়ও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে ভাঙ্গনপ্রবণ ব্রহ্মপুত্র। প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও নদীর পাড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙ্গন। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি, কড়াইবড়িশাল গ্রামে প্রায় দুই কিলোমিটার, নয়ারহাটের বজড়াদিয়ারখাতা এলাকায় প্রায় ১ কিঃ মিঃসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন ও অষ্টমীর চর ইউনিয়নে প্রায় ২ কিঃ মিঃ এলাকাজুড়ে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন এবং রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা এলাকায় প্রায় ১ কিঃ মিঃ তিস্তার ভাঙ্গন চলছে, এবং ব্রহ্মপুত্রের থাবায় উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল এলাকার পাউবো বাঁধ ও ডানতীর রক্ষা প্রকল্পে ধস দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে স্থানীয় পাউবো। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, চর নিয়ে আমাদের কোন পরিকল্পনা বা কার্যক্রম নেই আর গত ১ যুগে আগে ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী অংশে কতটুকু গভীরতা ছিল সেটি জানা নেই আর গভীরতা নিয়ে আমাদের স্টাডি নেই, ডানতীর রক্ষা প্রকল্প ভাঙ্গন ঠেকাতে আমরা সব সময় প্রস্তুত আছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, প্রতি বছরের মতো ভাঙ্গন কবলিত গৃহহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী, ঢেউটিন ও নগত অর্থ বিতরন করা হয়েছে। ভাঙ্গনকবলিত মানুষের দাবি, স্থায়ী বাঁধ দিয়ে এলাকায় ভাঙ্গন বন্ধ করা হউক।