শেরপুর প্রতিনিধি: শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকট সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী শেরপুর সরকারী কলেজ। খুরিয়ে খুরিয়ে চলছে শেরপুরের একমাত্র এই সরকারী কলেজটি। স্নাত্বক ও স্নাত্বকউওর পাঠদান কার্যক্রম চললেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক।এছাড়াও কয়েকটি বিষয়ের উপর মাষ্টার্স না থাকায় অনার্স শেষ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হচ্ছে ঢাকায় কিংবা ময়মনসিংহে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা। সমস্যা সমাধানে সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের যথাযত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়,উচ্চ শিক্ষা প্রসারের লক্ষে ১৯৬৪ সালে নির্মিত শেরপুর সরকারী কলেজটি কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। এখান থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশ ও দেশের বাইরে গুরুত্বপৃর্ন পদে জায়গা করে নিয়েছেন অনেকেই। সব কিছুর পরিবর্তন হলেও আধুনিকতার ছুয়া লাগেনি কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা শেরপুর সরকারী কলেজটিতে।একাদশ দ্বাদশ সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে অনার্স, মাষ্টার্স, বিএ পড়ানো হয় এই কলেজটিতে। লেখাপাড়া করেন প্রায় পনেরো হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু কলেজটিতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। প্রায় পনেরো হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠ দানের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ২৫০ জন শিক্ষক কিন্তু শিক্ষক আছে মাত্র ৬৭ জন। ব্যাহত হচ্চে পাঠ দান।শেরপুর জেলার পাচটি উপজেলা ছাড়াও জামালপুরের বকশীগজ্ঞ, দেয়ানগজ্ঞ,কুড়িগ্রাম জেলার,রাজিবপুর রৌমারী সহ ময়মনসিংহের কয়েকটি উপজেলার শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়া করেন জেলার একমাত্র সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপিটে। আবসিক হলেরও রয়েছে সংকট। ছাত্রদের জন্য রয়েছে একটি ও ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটি করে হল। যার ছিট সংখ্যা মাত্র দুইশ। যা ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
অবকাঠামো উন্নয়ন নেই বললেই চলে। প্রসাশনিক ভবন,অডিটোরিয়াম,একাডেমিক ভবন,ছাত্র সংসদ ভবন, ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন নেই এই কলেজটিতে। এছাড়াও ১৪টি বিষয়ে অনার্স থাকলেও তিনটি বিষয়ে ইসলাম শিক্ষা,ইসলামে ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইংরেজী এই তিনটি বিষয়ে মাস্টার্স না থাকায় ছাত্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হয় ঢাকায় । এতে করে চরম শিক্ষা সংকটে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।
একাদ্বশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী রিয়া সুলতানা মেঘলা বলেন,আমাদের শেরপুর সরকারী কলেজে ভালো খাবার পানির কোন ব্যবস্থা নেই।ক্লাস ছুটি হলে সবাই মিলে বই পড়বো সেটারও কোন ব্যবস্থা নেই। এই কলেজটি জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ হলেও আদর্শ কোন সুযোগ সুবিদা নেই।ক্লাস রুমের সংকট রয়েছে। একটি ক্লাসে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকলে আমাদের পড়া বুঝতে সুবিদা হয়। কিন্তু একেকটি ক্লাসে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী থাকে। এতে ক্লাসে চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়।
অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, শেরপুর সরকারী কলেজে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেন যাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দুর দুরান্ত থেকে কলেজ করতে হয়। ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য মাত্র একটি হোস্টেল রয়েছে।যদি আরো কয়েকটি হোস্টেল নির্মান করা হতো তাহলে শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার মান আরো বৃদ্ধি পেত এবং মেধাবী ও গরীব ছাত্রছাত্রীদের অনেক উপকার হতো।
ইসলামে ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরিতে আমাদের কলেজে শিক্ষক আছে মাত্র ৬৭ জন। প্রয়োজন ২৫০ জন শিক্ষক। এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শিব সংকর কারোয়া বলেন, আমাদের শেরপুর সরকারী কলেজ থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে।এই কলেজে তিনটি বিষয়ে ইসলাম শিক্ষা,ইসলামে ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং ইংরেজী এই তিনটি বিষয়ে মাস্টার্স না থাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাত্র ছাত্রীরা অনেকেই বাইরের জেলায় যেতে চায় না।এতে করে অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞিত হচ্ছে।
শেরপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আব্দুর রউফ বলেন, প্রসাশনিক ভবন,অডিটোরিয়াম,একাডেমিক ভবন,ছাত্র সংসদ ভবন, ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন নেই এই কলেজটিতে। সরকার দ্রুত আমাদের কলেজের সমস্যাগুলো সমাধান করে শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবেন এটাই শিক্ষক শিক্ষার্থীর দাবি।