বন্ধ হয়ে গেছে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া হাসপাতাল। কর্মরত কর্মচারীদের বেতন ভাতা না দিয়েই হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বেতন ভাতার জন্য ওই সকল কর্মচারী আন্দোলন করলেও পারিশ্রমিক জোটেনি তাদের ভাগ্যে। শেষে শুধু অভশাপ দিয়ে বেতন ভাতা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন তারা।
বিশ্বের একমাত্র নাকি আরো আছে ফাইলেরিয়া হাসপাতাল তা অজানা অনেকের কাছে। তবে বীরদর্পে প্রচার করা হয়েছিল বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নাকি সৈয়দপুরে।
সে যা হোক ফাইলেরিয়া রোগের বিনে পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা বলে ১৯৯৫ সালে প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা হয় এ হাসপাতালটি। পরবতীতে দাতা সংস্থার দেয়া অনুদানের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক মডেলের দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর নিয়োগ দেয়া হয় বিভিন্ন পর্যায়ে স্টাফ।
ক্রয় করা হয় হাসপাতালের যন্ত্রপাতি,এ্যাম্বুলেন্স, সরঞ্জাম এবং যানবাহন। এভাবে শুরু হয়েছিল হাসপাতালের যাত্রা। যাত্রা শুরুর পর থেকে বিনে পয়সায় কোন রোগের চিকিৎসা এখানে হতো না। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোগীদের সেবা দেয়া হতো। টাকার জন্য অনেক রোগীকে আটকে রাখা হতো এমন ঘটনাও ঘটেছে সেখানে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে সে সময় ৬ জনকে চাকুরী হারাতে হয়েছে।
প্রথমাবস্থায় এখানে প্রচার করা হয় গোদ রোগের চিকিৎসার কথা। পরবর্তীতে গোদ রোগের চিকিৎসার দিকে ঝুঁকে না পড়ে এখানে চিকিৎসা দেয়া শুরু হয় হাইড্রোসেল,সিজারসহ অনেক রোগের। ক্রমে ক্রমে হাসপাতালটি ভরে যায় দুর্নীতিতে। সে সময় চিকিৎসকসহ ২৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারী সেখানে কর্মরত ছিলেন। এ হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ পায় বিভিন্ন মিডিয়ায়। শুধু হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম দূর্নীতি নয় এ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এর বিরুদ্ধেও ছিল বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ।
এরপর থেকে হাসপাতালটির দিকে নজর পড়ে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের। চিকিৎসার অবহেলার কারণে এখানে রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে । সূচিকিৎসা না পেয়ে এলাকার লোকজন ঘেরাও করে রাখে এমন ঘটনাও ঘটেছে সেখানে।
বেতন ভাতার জন্য কর্মচারীদের আন্দোলন করতে হয়েছে । শেষে হাসপাতালের পরিচালক এটি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে এরই মধ্যে তিনি আরও একটি ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নির্মাণ করেন ঢাকার সাভারে। আর এ কারণেই সৈয়দপুর হাসপাতালটির দিকে তার আর কোন নজর ছিল না।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,অনিয়ম দূর্নীতি নয়,হাসপাতালের আয়-কমে যাওয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে হিমসিম খেতে হয়। তাছাড়া ওই এলাকার কতিপয় লোক রাতের বেলা হাসপাতালের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমি এটি ছেড়ে দিয়ে চলে আসি ঢাকায়।
দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ওই হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে আবার এটি চালুর উদ্যেগ নেন ভাড়াটিয়া মোঃ রাকিবুল ইসলাম তুহিন নামে এক ব্যক্তি। তার বাড়ী রংপুর পীরগঞ্জে। তিনি এখানে এসে হাসপাতাল চালু করবেন এমন প্রচার করতে থাকেন। চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন। কিছুদিন পর তিনিও বেতন ভাতা দিতে পারেননি কর্মরতদের। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধেও হয় মামলা। শেষ মেষ তিনিও হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান। বর্তমানে হাসপাতালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। জনস্বার্থে এটি পুনরায় চালুর দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।