নীলফামারীর সৈয়দপুরে আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ জাতের ধানের বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এদিকে বাজারে ধানের দাম ভাল পেয়ে কৃষকরা আরো আনন্দিত।
বিশেষ করে এ অঞ্চলে আশ্বিন ও কার্তিক মাসকে বলা হয় মঙ্গার মাস। আশ্বিন ও কার্তিক মাস এলে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা দেখা দেয়। তাই এ দুই মাসের জন্য বিশেষ করে শ্রমজীবি মানুষ সঞ্চয় করে রাখতো। কারণ এ সময় মাঠে কোন কাজ থাকে না। অনেকটা অলস সময় পার করতে হয় কৃষি শ্রমিকদের। কাজের অভাবে অনেককে থাকতে হয় বেকার। কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অনেকের দিন চলে যায়। তাই এ দুই মাসকে বলা হতো অভিশপ্ত মাস।
সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের কৃষক নুর ইসলাম জানান, এখন আর এ দুই মাস অভিশপ্ত নয়। এ দুই মাস এখন আর্শিবাদে পরিণত হয়েছে। আগাম জাতের ধান আসায় এখন কৃষকরা অত্যন্ত খুশি। মঙ্গা এখন কি জিনিস তা বুঝা যায় না। সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাগডোকরা গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী জানান মঙ্গা এখন চলে গেছে ভুমধ্যসাগরে।
কৃষি শ্রমিক একরামুল হক বলেন,আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। তিনি বলেন,এক সময় এ দুই মাস আমরা কাজের অভাবে বসে থাকতাম। পরিবারে নেমে আসতো অভাব অনটন। আজ উন্নত জাতের ধান বীজের কারণে এ দুই মাসে আগাম কাটা মাড়াই শুরু হয়। এখন ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে আমাদের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে আগাম জাতের ধান কাটছেন শ্রমজীবি মানুষেরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মাঠে মাঠে চলছে আগাম জাতের ধান কাটা ও মাড়াই। কাজী পাড়ার কৃষক হাকিম বলেন,ধানের ফলন বেশ ভাল হয়েছে পাশাপাশি বাজারে ধানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ঢেলাপীর হাটে ধান বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন,তিনি এক বিঘা জমিতে বিনা ধান-৭৫ প্রতি বিঘায় ৩৪ মণ করে ফলন পেয়েছেন। হাটে আসা অপর ধান চাষী লাল মিয়া জানান,তিনি বিনা -৭ ধান চাষ করেছেন প্রতি বিঘায় ৩২ মণ করে ধান পেয়েছেন।
আগাম জাতের ধানগুলি হলো বিনা-৭,ব্রী ধান-৩৩, ব্রী ধান-৫৬, ব্রী ধান-৬২,বিনা ধান-৭৫ সহ আরো নতুন নতুন জাত এবার লাগানো হয়েছে। চারার বয়স ২৫ দিন হলে তারপর জমিতে লাগানো হয়। এই সকল ধান ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে জমি থেকে ধান ঘরে তোলা যায়। আগাম জাতের ধান চাষ করে,আগাম জাতের আলু,শাক-সব্জি,সরিষা, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল আবাদ করা যায়। একই জমিতে তিন ফসল আবাদ করা হচ্ছে। ধানের দাম ও খড়ের দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে কৃষক। কৃষকেরা আগাম জাতের ধান কাটা,মাড়াই করে তারা জমিতে নতুন ফসল আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের কৃষক হামিদুল ইসলাম বলেন,আগাম জাতের ধান আসায় মঙ্গা এখন দুর হয়েছে।
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান,এক সময় আশ্বিন কার্তিক মাস ছিল আমাদের কাছে অভিশাপ। কারণ এ সময় হাতে কাজ থাকে না। অসহায় গরীব কৃষকরা চড়া সুদে টাকা নিতো সুদী মহাজনের কাছে। সেই টাকা পরিশোধ করতে কৃষকের ধান চলে যেত সুদী মহাজনের গোলায়। তাই তাদের গোলায় আর ধান উঠতো না। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুষন বলেন,কৃষকেরা আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আমরাও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আগাম জাতের ধান চাষ হওয়ায় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আগাম জাতের ধান প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ ফলন পাচ্ছে কৃষকেরা। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে এই ধান কেটে ঘরে তোলা যায়।