ফুলবাড়িয়ায় আনই রাজার দিঘি

এফএনএস (মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ; ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৩৬ পিএম
ফুলবাড়িয়ায় আনই রাজার দিঘি

ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের আনুহাদী গ্রামে রয়েছে এক বিশাল দিঘি। কয়েক শতাব্দী আগে এলাকাটি ছিল আনই রাজার রাজত্বের অংশ। তখন আনই রাজার প্রাসাদের চারদিক ঘিরে ছিল ২০০ মিটার  প্রস্থের প্রায় তিন হাজার ৫০০ শতাংশ আয়তনের বিশাল ও গভীর দিঘি। দিঘির দক্ষিণ পাশে ছিল চার ঘোড়ার রথ চলার মতো     প্রশস্ত প্রবেশপথ।

কিংবদন্তী রয়েছে, কোনো একদিন বিকেলে প্রচণ্ড এক ঝড় রাজপ্রাসাদ লণ্ডভণ্ড করে দিঘিতে ডুবিয়ে দেয়। কালের প্রবাহে কোনো রাজত্ব বা রাজপ্রাসাদ না থাকলেও রয়ে গেছে আনই রাজার স্মৃতি 'আনই রাজার দিঘি'। দিঘিটি স্থানীয়দের কাছে 'আনই নদী' হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাজা শশাংকের রাজত্বকালে এলাকাটি প্রাগ জ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর আনই রাজার রাজবাড়ি ছিল ফুলবাড়িয়ার বানার নদীর তীরে।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রাঙামাটিয়া ইউনিয়নে বিশাল বন্ধ জলাশয় বড়বিলা বিল ও বানার নদীর পারে আনুহাদী  গ্রাম।   প্রত্যন্ত এ গ্রামটিতে দেখা যায় সবুজের সমারোহ। 'আনই জলমহাল' হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় দিঘিটি লিজ দেয়। দিঘির দুই পাশ দিয়ে চলে গেছে গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। দিঘির পারে সবুজ গাছের বেষ্টনী। চারদিকে দিঘি, মাঝখানে সবুজে ছাওয়া ছোট্ট একটি দ্বীপের মতো জায়গা। স্থানীয়রা বলেন, সেখানেই ছিল আনই রাজার প্রাসাদ।

কালের বিবর্তনে রাজ পরিবারের স্মৃতি বলতে দিঘি ছাড়া আর কিছুই নেই। শত শত বছরের পুরনো আম, চাম্বল, কাঁঠাল, সেগুনসহ নানা ধরনের বড় গাছ বহু আগেই কেটে ফেলা হয়েছে। এখন সেখানে বিশাল সেগুনগাছের বাগানসহ নানা বৃক্ষ রয়েছে। এগুলো ব্যক্তিমালিকানার। ৩৫-৪০ পরিবার বাস করে 'রাজার ভিটায়'।

দিঘির পানি দিয়ে স্থানীয় কৃষকরা ফসল ফলায়। সবুজে ঘেরা দিঘিটি পাখির ডাকে মুখরিত থাকে। পানকৌড়ি ও নানা ধরনের বকের ওড়াউড়ি পর্যটকদের মুগ্ধ করে। আনুহাদী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা

হাবেজ উদ্দিন (৮৫) বলেন, 'আমার দাদার কাছ থেকে রাজার কথা শুনেছি। দাদা আবার শুনেছিলেন তাঁর বাপ-দাদাদের কাছ থেকে। আনই রাজার রাজ প্রাসাদ ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। শত্রুপক্ষ যাতে সহজে রাজ প্রাসাদে আক্রমণ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে চারদিকে এ বিশাল দিঘি খনন করেছিলেন তিনি। ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগেও আনই নদীতে পিতল, কাঁসা ও লোহার ভাঙা জিনিসপত্র পাওয়া যেত।'

আনই রাজার ভিটায় বসবাসকারী ইসলাম  (৪২) বলেন, 'রাজার ভিটার উত্তর দিকে পুকুর ঘাট ছিল, দক্ষিণে ছিল একটি সড়ক। চারদিকে ছিল বিশাল গাহ (দিঘি)। ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও পুকুর ঘাটে পিতল-কাঁসার টুকরা পাওয়া গেছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে