আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে তীব্র মতবিরোধ ও চাপা অসন্তোষ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ আসনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের একটি অংশের মধ্যে।
বিশেষত জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুল হাকিম চৌধুরীর অনুসারীরা প্রকাশ্যেই বিক্ষোভে নেমেছেন। তারা আরিফুল হককে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হাকিম চৌধুরীর সমর্থনে মিছিল ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে জড়ো হয়। কর্মীরা স্লোগান দেন- “লোকাল চাই হাকিম ভাই”, “আর নয় বিদেশি, এবারে স্বদেশি”, “হাকিম ছাড়া মানব না”।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত দুইটার পর কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্তত ১৩টি স্থানে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে এবং আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থনে মিছিল বের হয়। একই সময়ে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের সমর্থকরাও ‘লোকাল চাই, হেলাল ভাই চাই’ স্লোগান দেন।
এ বিষয়ে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমি তা মেনে নেব। তবে যদি জামায়াতপন্থী বা বাইরে থেকে আনা কাউকে প্রার্থী করা হয়, তাহলে আমাদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ভোটাররা স্থানীয় মুখ দেখতে চায়।”
একই অভিমত ব্যক্ত করেন হেলাল উদ্দিন আহমদও। তিনি বলেন, “দল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। আমি স্থানীয় প্রার্থী, এলাকার মানুষ আমাকে চায়। দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আমি প্রচার চালিয়ে যাব।”
তবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী জানান, “আমি এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। যাকে দল মনোনয়ন দেবে, আমরা সকলে মিলে তার পক্ষে কাজ করব।”
অন্যদিকে, সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। শিগগিরই দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই আসনের প্রতিটি এলাকা আমার পরিচিত। জনগণের সমস্যা সম্পর্কে আমি অবগত। নির্বাচিত হলে প্রথম এক বছরের মধ্যেই স্থানীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করব। দলের ত্যাগী ও সম্মানিত নেতাদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করব।”
সূত্র জানায়, আরিফুল হক মূলত সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে চেয়ারপারসনের নির্দেশে তাকে সিলেট-৪ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। গত ৬ নভেম্বর রাতে ঢাকা থেকে ফেরার পর ৭ নভেম্বর বাদ জুমা গোয়াইনঘাটের রাধানগর বাজার জামে মসজিদে নামাজ আদায় ও প্রয়াত এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করেন।
আরিফের মনোনয়ন ঘোষণায় তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উল্লাস দেখা গেছে। তারা বলছেন, “আরিফুল হক কাজের মানুষ। সাইফুর রহমানের হাত ধরে উন্নয়ন করতে শিখেছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে তাঁর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে, তিনি সিলেট-৪ আসনে উন্নয়নের রেকর্ড ভাঙবেন।”
তবে আবদুল হাকিম চৌধুরীর অনুসারীরা বলছেন, “দুর্যোগে-দুর্দিনে আমরা হাকিম চৌধুরীকেই পাশে পেয়েছি। তিনি এলাকার সন্তান, স্থানীয়ভাবে শক্ত অবস্থানে আছেন। অতিথি প্রার্থী কাউকে আমরা চাই না।”
সিলেট-৪ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় আরও রয়েছেন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন এবং প্রয়াত সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম।
উল্লেখ্য, বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে