রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ড. ইউনুসের প্রশাসন থেকেই দোসরদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা ভারত থেকে অডিও রেকর্ড পাঠাচ্ছেন, আর দেশে চলছে নাশকতার প্রস্তুতি।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আয়োজিত জাতীয় সংহতি দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে আঁচলের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়াকে ভালো চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এখন আবার শোনা যাচ্ছে, ১৩ তারিখে তারা কিছু করবে—এই সাহস তারা কীভাবে পায়? সরকারকে দোসরদের বিষয়ে কঠোর হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা, পদ্মা সেতুর টাকা, ফ্লাই ওভারের টাকা, সবকিছুর টাকা আছে আওয়ামী লীগের কাছে। যা দিয়ে নাশকতা তৈরি করে একটা চোরা রাস্তা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। তা দিয়ে নাশকতা তৈরিতে ভারত থেকে অডিও বার্তা দিচ্ছে শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে কেউ কেউ বলছে ২০২৯ সালে নির্বাচন হবে। এ তো ফ্যসিবাদী কণ্ঠস্বর।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, ‘৭ই নভেম্বর আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই সময় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান আত্মপরিচয়ের সংকটে ভুগেছিলেন, আর জিয়াউর রহমান আমাদের সেই সংকট থেকে মুক্তি দিয়েছেন।
’শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোবলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও আক্রান্ত হয়েছিল। ক্যাম্পাসে তখন কোনো সহাবস্থান ছিল না। এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ছাত্রদল সেই মূল্যবোধকে সামনে রেখে রাজনীতি করবে।
ডাকসু ও জাকসুর ভিপি, জিএস এবং এজিএস পদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আগে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এসব পদে নির্বাচিত সকলে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে হলে অবস্থান করেছেন এবং সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন- এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। এ সময় নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ চারটি কেন্দ্রে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা নানা অনিয়মে ভরা ছিল। আমরা দেখেছি, ডাকসু নির্বাচনে ভিপি, জিএস ও এজিএস প্রার্থীরা স্বৈরশাসকের আমল থেকেই পরিচয় গোপন করে হলে অবস্থান করেছে এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে যুক্ত থেকে নানা অপকর্মে জড়িত ছিল। জুলাই আন্দোলনে তাদের কাউকেই রাজপথে দেখা যায়নি। অথচ এই বাংলাদেশকে স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্ত করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১৪২ জন নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন এবং অসংখ্য কর্মী আজও আহত অবস্থায় সুস্থতার অপেক্ষায় আছেন।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের পিছিয়ে পড়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত সময়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অসংখ্য নেতা-কর্মী বিনা কারণে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। একজন কর্মীও হলে অবস্থান করতে পারেননি, বঞ্চিত হয়েছেন মৌলিক অধিকার থেকে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমাদের আরও ভালো করা উচিত ছিল, তবে এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করতে পেরেছি। ভবিষ্যতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্রতিটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আরও ভালো ফলাফল অর্জন করবে।অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।