দাকোপের গুনারী গ্রামের গৃহবধু স্মৃতিকনা মন্ডল। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সহযোগীতায় বসত ভিটেতে করা মিশ্র চাষে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে এখন সমাজেও তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আইলার তান্ডবে দীর্ঘ ২১ মাস পানি বন্দি থাকায় দাকোপের গুনারী এলাকার অধিকাংশ ভূমির আকৃতি যেমন পরিবর্তন হয়ে যায়, তেমনি লবনাক্তার প্রভাবে সেখানকার জমিতে ফসল ফলানো দ্বায়। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতায় দিশেহারা হয়ে গৃহবধু স্মৃতি কনা মন্ডল বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের ই আর সিসি প্রকল্পের আওতায় আধুনিক কৃষি উৎপাদনের প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। ২০২১,২২,২৩ মেয়াদী প্রকল্প থেকে পাওয়া ১৫ হাজার টাকা দিয়ে নিজ এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন ধান চাষ। সেখানে পাওয়া সফলতায় তিনি হয়ে ওঠেন আরো বেশী উদ্যোগী। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বর্তমানে জেজেএস ই আর সিসি-২ প্রকল্পের আওতায় ১৯ সদস্যের নারী দলের সদস্য হয়ে বসত ভিটের আঙিনায় শুরু করেছেন মিশ্র চাষ। দীর্ঘ বছরের ফেলে রাখা জমিতে প্রকল্প থেকে পাওয়া ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজের শ্রম আর প্রশিক্ষন থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি একই সাথে করেছেন মিষ্টি কুমড়া, আলু, ওলকপি, বিটকপি, টমেটো, বেগুন, ঢেড়শ, লাউ, ধনেপাতা, টকপালন, লালশাক, ওল, কচুরমূখী, কাঁচা মরিচ, কচু চাষ। বাড়ীর পুকুরে গলদা, রুই, রুপচাঁদা, মৃগেল এবং সকল ধরনের কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেছেন। একই সাথে করছেন ভেড়া পালন। এর পাশাপাশি তিনি বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসাবে বাড়ীতে বিভিন্ন ধরনের চারা তৈরী করে সে গুলো বিক্রি করছেন। পরিবারের সকল চাহিদা মিটিয়ে তিনি বছরে কেবল শাক সব্জি বিক্রি থেকে আয় করছেন ৩০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মিশ্র এই চাষে এ বছর ২ লক্ষাধীক টাকা আয় করবেন বলে তিনি আশা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন সাধারণ গৃহবধু হিসাবে আমি এমন জায়গায় কখন আসতে পারবো ভাবতেও পারিনি। পরিবারের আর্থিক দৈন্যতায় আমি যখন হতাশাগ্রস্থ তখন বেসরকারী এই সংস্থা আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ তৈরী করে দিয়েছেন। তিনি বলেন আমি নিজে এখন পরিবারে অর্থ দিয়ে সহায়তা করি। যে কারনে পরিবারে যেমন আমার মূল্য বেড়েছে তেমনি সমাজে আমার গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। জানা গেছে একই এলাকার সাবিনা বেগম, মাধুরী মন্ডলসহ অনেক নারী এখন এভাবে স্বাবলম্বি হয়ে উঠেছেন। স্মৃতি কনা সাবিনা বেগমদের পথ অনুসরন করে ওই এলাকার অবহেলিত নারী সমাজ এখন নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দরকার সরকারী বেসরকারী প্রশিক্ষন এবং সহায়তা। তাহলে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।