চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না বিপুলসংখ্যক শিশু

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:০১ এএম
চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না বিপুলসংখ্যক শিশু

চট্টগ্রাম বিভাগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক শিশু। মূলত পর্যাপ্ত বিদ্যালয় না থাকা, পরিবারের আর্থিক সংকট ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না শিশুদের একটি বড় অংশ। এ বছর চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৪৬ হাজারের বেশি শিশু কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়নি। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হওয়া শিশুদের ৩৫ শতাংশের বেশি অর্থাৎ ১৬ হাজার ৩৫৩ জনই হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা নোয়াখালী জেলায় ভর্তি হয়নি ৬ হাজার ৭৫৯ জন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম জেলা। সেখানে কোথাও ভর্তি হয়নি ৫ হাজার ৭৫০ শিশু। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে গত পাঁচ-ছয় বছরে বিভিন্ন সংকটে তুলনামূলক কমেছে বিদ্যালয়ে শিশু ভর্তির হার। বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায়ও বেড়েছে শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার হার। আর চলতি বছরের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক মন্দা ভাব বিদ্যালয়বিমুখ করেছে প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের। যদিও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৬ হাজার ৩৫৩ শিশুর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হওয়ার জন্য জেলার হাওরকে দায়ী করা হচ্ছে। ওই জেলার নাসিরনগর উপজেলা হাওরবেষ্টিত হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে শিশুদের আনুষ্ঠানিক ভর্তির প্রবণতা কম। জেলার ২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হাওর এলাকায় অবস্থিত। বিশেষ করে ওই জেলার দুটি ইউনিয়ন বছরের অনেকটা সময় প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প বিশেষ কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করা না গেলে কঠিন হবে ওই অঞ্চলের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ শতভাগে উন্নীত করা।

সূত্র জানায়, চলতি বছর চট্টগ্রাম বিভাগের ১১০টি উপজেলায় বিদ্যালয়ে গমন উপযোগী শিশুর সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ২৫২ জন। তার মধ্যে ভর্তি হয়েছে ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৯৭৮ জন। নিট ভর্তির হার ৯৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর ৫-১০ বছরের অধিক বয়সী ৫৯ হাজার ৯২৮ শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও ঝরে পড়েছে। যার হার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তার মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ১৩ হাজার ২৫১ শিশুর মধ্যে ২ হাজার ৫৪৯ জন কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি।

সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিভাগের চট্টগ্রাম জেলায় বিদ্যালয় গমন উপযোগী শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৫০৩ জন ছিলো আর রাঙ্গামাটি জেলায় ছিলো সবচেয়ে কম ৭৩ হাজার ৭১২ জন। তাছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে প্রাথমিকে ভর্তি না হওয়ার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিদ্যালয় থেকে শিশুদের ঝরে পড়ার হারও সবচেয়ে বেশি, ১৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দশমিক ৪৬ শতাংশ লক্ষ্ণীপুর জেলায়। তাছাড়া সবচেয়ে বেশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ৩ হাজার ২৯৮ জন চট্টগ্রাম জেলায় এবং সবচেয়ে কম ১৫২ জন রাঙ্গামাটি জেলায়। মূলত অর্থনৈতিক মন্দাভাবে মানুষের কর্মসংস্থান কমায় প্রান্তিক অঞ্চলেও তার প্রভাব বাড়ছে। কারণ প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যালয়ে গমন উপযোগী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণের পরিবর্তে পরিবারের উপার্জনে হাত লাগাচ্ছে। আবার শিক্ষিত বেকারের হার বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারে কারিগরি শিক্ষা কিংবা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে শিশুদের সম্পৃক্ত করার প্রবণতা বাড়ছে। তার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে যুক্ত হচ্ছে ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা। ওসব কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে বিদ্যালয়ে ভর্তি উপযোগী প্রায় অর্ধলাখ শিশু প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক (চট্টগ্রাম) মো. আতাউর রহমান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পিছিয়ে পড়া অঞ্চল, বিশেষ করে চর, পাহাড়, হাওরসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোতে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে ভর্তি নিশ্চিত করতে স্যাটেলাইট স্কুল কার্যক্রমসহ একাধিক উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।