মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা লুটের অভিযোগ

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) :
| আপডেট: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম | প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৩ পিএম
মৎস্য অধিদপ্তরের ডিজিসহ ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা লুটের অভিযোগ

২০২৪ সালের রমজানে রাজধানীবাসীর কাছে সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রির নামে মৎস্য চাষীদের টাকা লুটের অভিযোগ উঠেছে মৎস্য অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুর রউফ ও উপপরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

মাছ চাষীরা অভিযোগ করেন, সুলভ মূল্যে মাছ বিক্রির কার্যক্রমের জন্য মৎস্যের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এই দুই কর্মকর্তা প্রায় দুই কোটি টাকা সংগ্রহ করে। গত দেড় বছরে চাষীদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করে পুরো অর্থ নিজেরা আত্মসাৎ করেন।

সম্প্রতি চাষিদের সংগঠন ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফোয়াব) কর্তৃক মৎস্য উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের রমজান মাসে সাশ্রয়ী মূল্যে মাছ বিক্রয়ের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের গঠিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুর রউফ। বর্তমানে তিনি ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই কমিটির সদস্যসচিব ছিলেন এনএটিপির সাবেক প্রকল্প পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এই দুই কর্মকর্তা দেশের প্রান্তিক খামারীদের কাছ থেকে চাষিদের সংগঠন ফিশ ফার্ম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফোয়াব) মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে মাছ নেয়। চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পহেলা রমজান এক লক্ষ টাকার ডকুমেন্ট নিয়ে সত্তর হাজার টাকা প্রদান করে।

২০২৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ৭ হাজার ২৪০ কেজি রুই, ৭ হাজার ৫৪৩ কেজি পাঙাশ, ১১ হাজার ৫৩১ কেজি তেলাপিয়া ও ১ হাজার ৪৪৫ কেজি পাবদা মাছ বিক্রি হয়েছিল। সরবরাহ করা মাছের টাকা কিছু পেলেও এখনো ২১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা মৎস্য অধিদপ্তর দেয়নি। এছাড়া সরবরাহকৃত মাছ থেকে ৯শ’ কেজি মাছ সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান তার বন্ধুর মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন। মনিরুজ্জামান বর্তমানে অধিদপ্তরের চিংড়ি শাখার উপ-পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এর আগে সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পে দুর্নীতির দায়ে প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত বছর রমজানে (মার্চ-২০২৪) রাজধানীতে ৩০টি স্থানে ২৮ রমজান পর্যন্ত মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম সুলভমূল্যে সরবরাহ করার উদ্যোগ নেয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ১০ মার্চ খামারবাড়ির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে বেশ ঘটা করে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।

ফোয়াবের তথ্য অনুসারে, দেশের বিভিন্ন এলাকার চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এই মাছ তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করেছিল ফোয়াব। মাছ চাষিদের সংগঠন ফোয়াব ভর্তুকি মূল্যে মাছ সরবরাহের পাশাপাশি গাড়ি, বরফসহ আনুষঙ্গিক মালামালও সরবরাহ করে।

ফোয়াবের সভাপতি মোল্লা সামছুর রহমান শাহীন বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের আহ্বানে রমজান মাসে প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করেছি। রমজান মাসের মধ্যেই টাকা পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু দুই দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তারা সেই কথা রাখেননি। ফলে প্রান্তিক অনেক চাষি মাছ বিক্রির পুরো টাকাটা এখনো পাননি।’ এমনকি কমিটির সভাপতি বর্তমান ডিজি আবদুর রউফ একাধিকবার টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তিনি তা ভঙ্গ করেছেন। এ বিষয়ে মৎস্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ডিজি আবদুর রউফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিক্রি ব্যবস্থাপনার তদারকির দায়িত্ব ছিল আমার। টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টা তৎকালীন ডিজি আলমগীর দেখতেন। তবে পুরো টাকা পরিশোধ হয়নি, কিছু বকেয়া থাকতে পারে।’ তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমএম মনিরুজ্জামান কোন কথা বলতে রাজি হননি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে