ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার যেদিকে চোখ যায় যতদূর শুধু দুলছে রোপা আমন ধানের সোনালী শিশ। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে এলাকার কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ফসল আমন ধানে পাক ধরতে শুরু করেছে। অনেক কৃষক আবার তাদের জমির ধান কাটতে শুরু করেছে।গত'বছরের তুলনায় এবছর রোপা আমন রোপণের শুরু থেকে কৃষককে তেমনদুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। আমন চাষের ভরা মৌসুম আষাঢ় মাসে ছিল ব্যাপক আকাশের বৃষ্টির দেখা। যার ফলে সঠিক সময়ে রোপা আমন ধান রোপণ করতে কোন সমস্যা হয়নি কৃষকের। আর যারা আমনের শুরুতে ডিপ মটরের পানি কিনে আমন ধান রোপণ করছেন তাদের প্রায় জমিতে আগে ধানের শিশ গজাতে শুরু করলেও এখন পুরো মাঠজুড়ে একসাথে বের হতে শুরু করেছে রোপা আমন ধানের শিশ। এতে করে কৃষকরা তাদের কাক্ষিত ফসল দেখে তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন রোপা আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কমবেশি প্রায় সব জমিতে রোপা আমন ধানের শিশ বেরিয়ে পাক ধরতে শুরু করেছে। অনেকে আগাম রোপণকৃত রোপা আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করছেন। কৃষকরা জানান, যদি আকাশে কোন দুর্যোগ বালাই না হয় তাহলে ৭/৮দিনের মধ্যে আমন ধান কাটা ও মাড়াই জোরেশোরে শুরু হবে।গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দু,দিনে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির কারণে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন মাঠের রোপা ধানের গাছ হেলে পড়ে। যেসব ধানের শিষ বের হয়নি ও দানা নরম ছিল সেই ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে কৃষকদের লোকসানের বোঝা নিয়ে নিতে হবে বলে জানান।ফলে যে পরিমান ফলন হওয়ার কথা সেটা কমে যাবে। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ফলন হওয়ার কথা থাকলে ও হেলে পড়ায় ৫/৬ মণ কমে হবে বলে কৃষকরা জানানএবছর ধানের গোড়া পচা ও মাজরা পোকার আক্রমণ ছিল খুবই বেশি ফলে অনেকেই স্বস্তিতে ছিলেন,কিন্তু ধান পড়ে যাওয়ায় তো কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, এ বছর উপজেলায় আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১৮ হাজার ৭৩৪ হেক্টোর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমের প্রথম পর্যায়ে ধান ক্ষেতে ব্যাপক ভাবে মাজরা পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছিল।কৃষকরা বলছেন বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা,ধান উঠা পর্যন্ত বিঘা প্রতি আরো খরচ হবে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। এতে করে একেক বিঘা ধান কাটা পর্যন্ত মোট খরচ হবে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। রোপনকৃত জমি থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টন।ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার মাঠে মাঠে রোপা আমন ধান সোনালী রঙ ধারণ করেছে। কয়েক দিন পরেই পুরোদমে আমন ধানকাটা ও মাড়াই শুর হবে। তখন নতুন ধানের সুগন্ধে কৃষকের বাড়ি মুখরিত হবে। প্রতিটি কৃষক পরিবারে নবান্নের উৎসব বিরাজ করবে। তবে অনেক এলাকায় ধানের জমিতে পোকা ও রোগবালাই দেখা দিয়েছিল যে কারনে আশানুরূপ ধানের ফলন নিয়ে চিন্তিত বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন সঠিক সময়ে, পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই দমন করা হয়েছে।রোপা আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করছেন।অনেক কৃষক বলছেন ঝিনাইদহ জেলায় পোকার আক্রমণ কিছুটা থাকলেও কীটনাশক প্রয়োগ করায় তেমন ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে আবাদ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে জানান।