আধুনিক সম্পর্ক, প্রজন্মের পার্থক্য ও পারিবারিক মানসিকতার টানাপোড়েন নিয়ে নির্মিত বলিউডের নতুন ছবি ‘দে দে পেয়ার দে ২’। ছবি ঘিরে দর্শকের আগ্রহ বাড়লেও মূল আলোচনায় উঠে এসেছে বয়সের ব্যবধান, সম্পর্কের স্বাধীনতা আর অভিভাবকদের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গি। ছবিতে অজয় দেবগন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকলেও মুখ্য আলোচনায় উঠে এসেছেন আর মাধবন।
ছবিতে রাকুল প্রীত সিংয়ের চরিত্র আয়েশা নিজের পছন্দে ছয় মাসের লিভ ইন সঙ্গী অশীষকে বিয়ে করতে চান। অশীষ তালাকপ্রাপ্ত এবং তার দুটি প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান রয়েছে। এই সম্পর্ককে প্রথমে সহজভাবে নেয় আয়েশার পরিবার। বাবা রাকেশ আর মা অনু, যাদের চরিত্রে রয়েছেন আর মাধবন ও গৌতামী কাপুর, নিজেদের আধুনিক ও খোলামেলা মানসিকতার মানুষ বলে বিশ্বাস করেন। কলেজজীবনের প্রেমিক থেকে আজও দাম্পত্যে ঘনিষ্ঠ তারা। নিজেদের উদার ভাবনাকে তারা প্রায়ই উচ্চারণ করেন, আমরা শিক্ষিত, আমরা আধুনিক।
পরিস্থিতি বদলে যায় যখন তারা জানতে পারেন আয়েশার সঙ্গী অশীষ বয়সে রাকেশের চেয়েও বড়। তখনই প্রকাশ পায় রাকেশের ঈর্ষা ও আধিপত্যবোধ। মাধবনের চরিত্রই এই অংশে ছবিকে অন্য মাত্রা দেয়। তিনি মনে করেন বাবাই সব জানে, আর মেয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্তও বাবাই নিতে পারে। অশীষকে তিনি মজা করে শয়তান বলে ডাকেন।
চরিত্রের এই পরিবর্তন দর্শককে মনে করিয়ে দেয় বছরের পুরোনো টিভি শো ‘ঘর জামাই’তে মাধবনের সেই মজার চরিত্রের কথা, যেখানে তিনি ছিলেন এক দক্ষিণ ভারতীয় জামাই। এবার তিনি বিপরীত ভূমিকা পালন করছেন, যা ছবিতে এনে দিয়েছে আলাদা আকর্ষণ।
অজয় দেবগন ছবিতে থাকলেও তাকে খুব বেশি দৃশ্যে দেখা যায় না। তবে যেটুকু আছেন, সেখানে তিনি সম্পর্ক নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত, তবে পরিণত মানুষ হিসেবেই ধরা দিয়েছেন। জাভেদ জাফরির চরিত্র রোনক তাকে বলেন সত্যিকারের প্রেমিক হতে গেলে সাহস দেখাতে হয়। অশীষও সেই চেষ্টা করেন। এমনকি আয়েশার পরিবারকে খুশি করতে তিনি পুরিপারোশা পাঞ্জাবি নাশতা রান্না করেন। পরের দৃশ্যে রাকেশ আর অশীষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ নিয়ে গল্প জমে ওঠে।
ছবির সবচেয়ে প্রাণবন্ত অংশগুলোর একটি আসে আয়েশার নানির মাধ্যমে। সুহাসিনী মুলাই অভিনীত নানি বড়দের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এই ধারণাকে মজার ছলে উল্টে দেন। নাতি নাতনিদের জন্মতারিখ থেকে ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গার খেলার স্কোর, সবই মুহূর্তে বলে দেন তিনি। এতে বোঝা যায় বয়স নয়, মনই হচ্ছে আসল চালিকাশক্তি।
লভ রঞ্জনের প্রযোজনায় নির্মিত এই ছবিতে নারীদের কণ্ঠকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়েশার চরিত্র কোনোভাবেই অসহায় নয়। নিজের সম্পর্ক, নিজের সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেন। পরিবার বা সঙ্গী কেউ ভুল করলে সঠিক আচরণ কী হওয়া উচিত তা তিনি অকপটে বলে দেন।
ছবিটি বয়সভিত্তিক বিচার, সামাজিক মানসিকতার দ্বৈততা, আবেগগত চাপ আর পিতৃতান্ত্রিক আচরণের প্রশ্ন তোলে। কমেডির ভেতর চেনা বলিউড ঘরানার রেফারেন্সও আছে। কাজল, শাহরুখ খান থেকে শুরু করে ফুল অউর কাঠে, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে বা সিংঘমের প্রসঙ্গ মাঝেমধ্যে হাসি এনে দেয়।
ছবিটি সামগ্রিকভাবে দর্শকের জন্য হালকা মেজাজের হলেও প্রশ্ন তোলে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে। সম্পর্কের বাইরে পরিবার কতটা যুক্তিসঙ্গত থাকে, আর কোথায় গিয়ে অযাচিত নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়, সেটিও ভাবতে বাধ্য করে।