মৃত্যুর দুই বছর পর স্বীকৃতি পেলেন মুক্তিযোদ্ধা কেরামত

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম
মৃত্যুর দুই বছর পর স্বীকৃতি পেলেন মুক্তিযোদ্ধা কেরামত

মৃত্যুর দুই বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. কেরামত আলী খান। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহিত রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব হরিদাস ঠাকুরের স্বাক্ষরিত গেজেটের কপিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম দেখতে পেয়ে মরহুম কেরামত আলীর স্ত্রী ও তিন মেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।

বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. কেরামত আলী খান ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকায় বনশ্রী আল-রাজী হাসপাতালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তৎকালীন সময়ে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের জন্য বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে গেজেটে তার নাম না থাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রণাঙ্গনের প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়া স্বত্বেও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই কেরামত আলীকে দাফন করা হয়।

কেরামত আলী খানের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, আজ যদি আমার স্বামী বেঁচে থাকতেন, তিনি নিজের চোখে যদি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম দেখতে পেতেন, তবে কতোইনা খুশি হতেন। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূিক্তর জন্য আমৃত্যু তার স্বামী পুলিশের আইজিপি, স্বরাষ্ট্র ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়, জামুকাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নাম দেখে যাওয়ার জন্য তিনি ব্যাকুল ছিলেন। 

কেরামত আলী খানের জ্যেষ্ঠ মেয়ে শিক্ষক কামরুন্নাহার রুবি বলেন, প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বাবা যেতেন। বাসায় ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফসোস করে বলতেন-অনুষ্ঠানে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রেষ্ট ও ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এ সম্মান থেকে বঞ্চিত। তিনি আরও বলেন-আজ যদি বাবা শয্যাশায়ী অবস্থায়ও বেঁচে থেকে তার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির খবর শুনতেন দারুন খুশি হতেন।

উল্লেখ্য, দেশ মাতৃকাকে রক্ষা ও স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন কেরামত আলী খান। স্বাধীনতার পরে তিনি পুলিশের চাকরিতে যোগদান করেন। সেখানে সার্ভিস বুকে তার নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা লেখা ছিলো। তবে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত ছিলোনা। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুর দুই মাস পূর্বে ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম সুপারিশ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করা হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে