রনক্ষেত্র বরিশাল : ছাত্র-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) | প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:১৭ এএম
রনক্ষেত্র বরিশাল : ছাত্র-শ্রমিক সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক

বাসে হাফভাড়া না নেয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল সরকারি বজ্রমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে হামলা চালিয়ে অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর করেছে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এসময় হামলা ও হামলা পাল্টা হামলায় শিক্ষার্থীসহ উভয়গ্রুপের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটার পর্যন্ত সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।

হামলা ও পাল্টা হামলা শুরুর পর থেকে নথুল্লাবাদ দিয়ে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। ফলে চরম ভোগান্তিতে পরেছিলো এ রুটে চলাচল করা যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. মামুন উল ইসলাম।

বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবি, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাস টার্মিনালে এসে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে বিচার দাবি করলে শ্রমিকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে তাদের ৩০/৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে।

বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু বক্কর মুলাদী থেকে বাসযোগে বরিশালে আসার সময় হাফ ভাড়া দিতে চাইলে তার সাথে বাসের সুপারভাইজার বির্তকে জড়িয়ে পরেন। এসময় উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডার একপর্যায়ে বাসের স্টাফরা আবু বক্করকে মারধর করে।

বিএম কলেজের ছাত্র মো. রাজু বলেন-মোবাইল ফোনে আবু বক্করের ওপর হামলার বিষয়টি জানতে পেরে তারা ১৫/২০ জন শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালে এসে বিষয়টি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেনকে অবহিত করেন। এসময় তিনি (মোশারফ) কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো শ্রমিকদের ছাত্রদের ওপর লেলিয়ে দেন। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়।

তিনি আরও বলেন-এ ঘটনার পর তারা বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে সহপাঠীদের জানালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে বাস টার্মিনালে এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন-শিক্ষার্থীরা এলোপাথাড়িভাবে বাসস্ট্যান্ডে সারিবদ্ধ করে রাখা কমপক্ষে অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর করেছে। একপর্যায়ে তারা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে শত শত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি টের পেয়ে শ্রমিকরা বাসস্ট্যান্ড থেকে শটকে পরেন।

পরিবহন শ্রমিক নেতা আরজু মৃধা বলেন, কলেজ বন্ধের দিনেও হাফভাড়া দেয়া নিয়ে বরিশাল-মুলাদী রুটের এক শিক্ষার্থীর সাথে বাস শ্রমিকের বিরোধ হয়। এরপর সন্ধ্যায় বিএম কলেজের কয়েকশ’  শিক্ষার্থী এসে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে পার্কিং করে রাখা অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর করে। এসময় সেখানে থাকা ১৫/২০ জন শ্রমিককে বেপরোয়া মারধর করে গুরুত্বর আহত করা হয়।

ঘটনাস্থলে থাকা বিএম কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, হাফভাড়া আমাদের অধিকার। আজ (শনিবার) মুলাদী থেকে বরিশাল নগরীতে আসার পথে এক শিক্ষার্থী হাফভাড়া দিতে চাইলে তাকে মারধর করে বাস শ্রমিকরা। খবর পেয়ে আমরা (শিক্ষার্থীরা) নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে জড়ো হয়ে শ্রমিকদের বিচারের দাবি করি। এসময় আমাদের ওপর বাস শ্রমিকরা হামলা চালায়। এতে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।

বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ওসি মামুন উল ইসলাম বলেন, রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল পরিমান সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। বর্তমানে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অপরদিকে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় অর্ধ শতাধিক বাস ভাঙচুরের ঘটনায় বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাস মালিক সমিতি। ভাঙচুর হাওয়া বাস মেরামত না হওয়া পর্যন্ত কোন রুটে বাস চালানো সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বরিশাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন। কবে নাগাদ বাস চলাচল শুরু হবে তা তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। তবে আকস্মিকভাবে বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে