দেশে আশঙ্কাজনক হারে অপহরণ বাড়ায় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৮:২৫ এএম
দেশে আশঙ্কাজনক হারে অপহরণ বাড়ায় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

দেশে আশঙ্কাজনক হারে অপহরণ বাড়ায় আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে অপহরণের মামলা হয়েছে ৯২১টি। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে তিনজন মানুষ অপহৃত হয়েছে। গত বছর একই সময় এ সংখ্যা ছিল ৫০১। অর্থাৎ এক বছরে অপহরণের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আর বেশির ভাগ অপহরণই মুক্তিপণ, প্রতিশোধ বা ডিজিটাল যোগাযোগের অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে ঘটছে। সামাজিক অবক্ষয়, অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ডিজিটাল অপরাধের প্রসারের কারণে এ প্রবণতা বেড়েছে। ফলে নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। চরম আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। ভুক্তভোগী এবং পুলিশ সদর দপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে গত অক্টোবরে মোট ১১০টি অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) দেশে মোট ৯২১টি অপহরণের মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আগে যেখানে বেশির ভাগ অপহরণ ঘটত রাতের অন্ধকারে, এখন তা দিনের আলোতেও ঘটছে। অনলাইন রাইডশেয়ারিং, ব্যবসায়িক লেনদেনের ছলে কিংবা প্রেমের সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। পারিবারিক বা রাজনৈতিক শত্রুতা এবং আর্থিক কারণে সবচেয়ে বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটছে। তাছঅঢ়অ যৌন নিপীড়নের ঘটনাও অনেক সময় অপহরণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর চাঁদাবাজ চক্র ছাড়াও পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর সম্পৃক্ততাও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।

সূত্র জানায়, অতিসম্প্রতি রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ক্যামব্রিয়ান কলেজের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৭ নভেম্বর তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে অপহরণকারীরা নিহতের পরিবারের কাছে ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু টাকা না পেয়ে ও বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ওই ছাত্রকে হত্যা করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর নওগাঁয় এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে একটি চক্র ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার ও চক্রের হোতাদের একজনকে গ্রেপ্তার করে। তার আগে ৩ অক্টোবর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নির্যাতন করা হয়। পরে ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। কক্সবাজারের টেকনাফে মুক্তিপণ দাবিতে অপহৃত এক কলেজছাত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৫। অপহরণ বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্কুল-কলেজগামী সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। 

সূত্র আরো জানায়, অপহরণের  দিক থেকে চলতি বছরের অক্টোবর মাস সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। ওই মাসে ১১০ জন অপহৃত হয়। আর জানুয়ারিতে ১০৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭৮ জন, মার্চে ৮৩ জন, এপ্রিলে ৮৮ জন, মে’তে ৮২ জন, জুনে ৮০ জন, জুলাইয়ে ৯০ জন, আগস্টে ৯০ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৯৬ জন। গত ১০ মাসে গড়ে প্রতিদিন তিনজনের বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছে। আর ২০২৪ সালে মোট ৬৪২ জন অপহৃত হয়েছিলো। ওই বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে অপহৃত হন ৫০১ জন। মাসে গড়ে ৫০ জন। অথচ চলতি বছর একই সময় মাসিক গড় বেড়ে ৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রকৃত অপহরণের সংখ্যা পুলিশের রেকর্ডের চেয়েও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মামলা হয় না। মূলত দেশে আইনের শাসনে বড় ঘাটতিতেই প্রতিদিন গড়ে তিনজন অপহৃত হচ্ছে।

এদিকে অপরাধ ও সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, অপহরণের প্রকৃতি দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আগে মুক্তিপণ আদায় ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু এখন সামাজিক প্রতিশোধ, প্রেম-বিবাদ কিংবা ডিজিটাল যোগাযোগের অপব্যবহার থেকেও অপহরণের ঘটনা ঘটছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানান, অপহরণের প্রতিটি ঘটনাকে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। সামপ্রতিক সময়ে একাধিক অপহরণচক্রকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাইবার ইউনিটও ডিজিটাল যোগাযোগের মাধ্যমে সংঘটিত অপহরণ রোধে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হচ্ছে, অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগে সতর্ক থাকা এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ থানায় বা ৯৯৯ নম্বরে জানানো।