মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনের বিএনপি নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত টানা প্রায় ১০ ঘণ্টা এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেওয়ার ঘটনা শিবচর উপজেলার যোগাযোগ ও জনজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিএনপির মনোনীত (মনোনয়ন স্থগিত) প্রার্থী কামাল জামান নূরউদ্দিন মোল্লা তার নেতাকর্মীদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে, বিভিন্ন পয়েন্টে বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে অবস্থান রেখে রাতভর টহল দেন- উদ্দেশ্য ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী (প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিএনপির দাবি অনুযায়ী) দ্বারা জ্বালাও-পোড়া ও নাশকতা প্রতিহত করা।
বিএনপি নেতা কামাল জামান নূরউদ্দিন মোল্লা জানান,শনিবার রাত ১১টা থেকে রোববার (১৬ নভেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত তিনি ও তার নেতাকর্মীরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ভাঙ্গা সীমানা পর্যন্ত বিভিন্ন নিরাপত্তা পয়েন্টে অবস্থান করেন। এলাকাবাসীর দাবি-ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে রাতভর জনজীবনে অনিশ্চয়তা কমেছে এবং সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেছেন।
বিএনপি নেতা ও স্থানীয় পদাধিকারীরা অভিযোগ করেছেন যে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই আ, লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত গোষ্ঠী এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে - বিশেষত সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও জনজীবনে বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মকাণ্ডে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়।, ১৩ নভেম্বর দিনে ভাঙ্গা- বরিশাল সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করছে , গাছ কাটা এবং কিছু জায়গা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে; সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে মাদারীপুর-১ এর বিএনপি শাখা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নেমে পড়ে।
বিএনপি নেতাদের দাবি শিবচরের মানুষ এখন আতঙ্কে নেই, কারণ আমরা মাঠে আছি। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী গ্রুপ যারা অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে -তাদের বিরুদ্ধে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পাহারা দিচ্ছি। শিবচরের মানুষ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়-আমরা সেই দায়িত্ব পালন করছি।”
কামাল জামান মোল্লা বলেন, “এ এলাকায় কোনো ধরণের নাশকতা বা ভয়ভীতি ছড়াতে দেওয়া হবে না। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সারারাত কাজ করছি, ভবিষ্যতেও করে যাব।” গত ১৭ বছর স্বৈরাচারী আ, লীগের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলাম, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যেহেতু মাঠে থেকে সাবধান মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি ,এই জনগণের নিরাপত্তা দিতেও মাঠে কাজ করে যাবো ।
বিএনপির শিবচর শাখার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ১২ নভেম্বরের ভোর রাতের ঘটনা ও পরবর্তীকালে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে তে অভিযানকালে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের হামলায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। দলীয় সূত্রে বলা হয়, তার মধ্যে শাজাহান মোল্লা সাজু নামে , শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কসহ সাত-আট জন গুরুতর আহত হয়েছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক শাজাহান মোল্লা সাজু ও সদস্য সচিব সোহেল রানা ঘটনার সময় নিরাপত্তা কার্যক্রমে ছিলেন-তারা নিজস্বভাবে আহতদের হাসপাতালে পাঠানো ও চিকিৎসার সুব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য-এই প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত (১৬ নভেম্বর ) স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক প্রতিক্রিয়া সংবাদকক্ষে সরাসরি পাওয়া যায়নি। আহত কিংবা ঘটনার বিষয়ে প্রশাসনের সূত্রে যে কোন মন্তব্য নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সাংবাদিকদের জানান, রাতভর নেতা-কর্মীদের তৎপরতায় তারা কিছুটা স্বস্তি বোধ করেছেন। এক তরুণ ব্যবসায়ী বলেন, “রাতের বেলায় অনেকেই আতঙ্কে থাকত-কিন্তু নেতৃবৃন্দকে দেখে আশ্বস্ত লাগল, যানজটও না এসে ও চলাচল বেশিরভাগ অংশে স্বাভাবিক ছিল।” তবে একাধিক গ্রামবাসী জানান, রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে দুশ্চিন্তা এখনও কমেনি-তারা চান প্রশাসন দৃশ্যমানভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক এবং রাজনৈতিক দলগুলো সংযম প্রদর্শন করুক।
বিবেচনার বিষয়-গত এক বছরে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ও নানা ধরণের অভিযোগ-বিবাদের দফা দেখা গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রতিবেদকের হাতে থাকা দলীয় বক্তব্য অনুযায়ী গত বছরের (২০২৪) জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও তাদের বিরুদ্ধে বাহিত সহিংসতার বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে; সূত্রের দাবি অনুযায়ী সাক্ষ্য গ্রহণের পর গত ১৩ নভেম্বর একাধিক আ, লীগের নেত্রী হাসিনা সহ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল।
স্থানীয় পরিস্থিতি আপাতত শান্ত রয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ভবিষ্যতে পুনরায় সহিংসতা বা অরাজকতার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে-বিশেষত যখন সড়ক অবরোধ, জনসমাবেশ ও রাজনৈতিক বিরোধীতা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুশাসন ও আইনের শাসনের কার্যকর প্রয়োগ জরুরি বলে মত স্থানীয় নাগরিক, ব্যবসায়ী ও কিছু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন উভয়পক্ষের অনুরোধ থাকবে-দলগুলো সংযম রাখুক, এবং জনজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে প্ৰশাসনকে জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।