খুলনার অন্ধকারে ফের সন্ত্রাসের ছায়া

এফএনএস | প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:১৩ এএম
খুলনার অন্ধকারে ফের সন্ত্রাসের ছায়া

খুলনা মহানগর আবারও পরিণত হচ্ছে ভয় আর অনিশ্চয়তার নগরে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক খুন, গুলিবর্ষণ, চাঁদাবাজি ও বোমা হামলার ঘটনায় শহরজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ইমরান মুন্সি হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে যোগীপোলে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা-প্রতিটি ঘটনার পেছনে উঠে আসছে একাধিক সন্ত্রাসীচক্রের নাম। দীর্ঘ সময় শান্ত থাকা খুলনা যেন আবার ফিরে যাচ্ছে সেই অন্ধকার যুগে, যখন চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীদের রাজত্বে মানুষ ঘর থেকে বেরোতে ভয় পেত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, মহানগরে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ১২টি সন্ত্রাসীচক্র-যাদের মধ্যে আশিক, নূর আজিম, গ্রেনেড বাবু ও হুমা চক্র সবচেয়ে প্রভাবশালী। এই চক্রগুলো শুধু অস্ত্র বা মাদক ব্যবসায় নয়, ভাড়াটে খুন, চাঁদাবাজি ও প্রতিদ্বন্দ্বী দমনেও জড়িত। আশিক চক্রের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২টিরও বেশি মামলা, নূর আজিম চক্র অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান, আর হুমা চক্র সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অভিযুক্ত। গ্রেনেড বাবু ও পলাশ চক্রের দ্বন্দ্বও এখন নতুন সংঘাতের জন্ম দিচ্ছে। খুলনায় সন্ত্রাসের পুনরুত্থান শুধু অপরাধ নয়-এটি সামাজিক নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সক্ষমতার জন্যও বড় হুমকি। ১৪ মাসে ৩৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে-এ সংখ্যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যর্থতার জ্বলন্ত প্রমাণ। আরও উদ্বেগজনক হলো, অনেক ভুক্তভোগী ভয় বা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা অপরাধীদের কারণে থানায় অভিযোগও করতে পারছেন না। ফলে অপরাধীরা আইনের নাগালের বাইরে থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। প্রশ্ন জাগে-যেখানে প্রতিটি চক্রের সদস্যদের নাম, এলাকা, এমনকি অপরাধের ধরন পর্যন্ত জানা, সেখানে গ্রেপ্তার ও দমন কার্যক্রমে এই শৈথিল্য কেন? নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রশাসন যদি রাজনৈতিক প্রভাব, দলীয় পরিচয় বা স্থানীয় শক্তির ভারসাম্যের চিন্তা করে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই সহিংসতা আরও বিস্তৃত হবে। খুলনার জনগণ আজ শান্তি ও নিরাপত্তা চায়, কোনো বাহিনীর আধিপত্য নয়। অপরাধ দমন শুধু অভিযান বা গ্রেপ্তারে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না; প্রয়োজন গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি, সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং তরুণদের এই চক্রে জড়ানো ঠেকাতে পুনর্বাসনমূলক কর্মসূচি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই শিল্পনগরী একসময় ছিল উন্নয়ন সম্ভাবনার প্রতীক। এখন সেই নগরী আবারও রক্তপাতের শিরোনামে পরিণত হচ্ছে। খুলনাকে বাঁচাতে হলে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে-রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে, আইন ও ন্যায়বিচারের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই।