ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে মোছা: কুলসুম বেগম (২২) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূঁইশ্বর গ্রামে বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনাটি ঘটেছে। গৃহবধুর পিতা ফারূক মিয়াসহ পরিবারের সবার দাবী ৩ লাখ টাকা দেওয়ার পরও স্বামী মামুন মিয়াসহ (২৭) ওই পরিবারের সকলে মিলে কুলসুমকে হত্যা করেছে। নিজেদের রক্ষা করতে তারা ফাঁসির নাটক সাজিয়েছে। আর স্বামী মামুনের স্বজনরা বলছেন, হত্যা নয়। কুলসুম আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ, নিহত গৃহবধুর পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ৪ বছর আগে ভূঁইশ্বর ছান্দের বাড়ির কৃষি শ্রমিক মো. ফারূক মিয়ার মেয়ে কুলসুমের সাথে পারিবারিক ভাবে একই গ্রামের উত্তর পাড়ার বাঙ্গারী ব্যবসায়ি আবুল হোসেনের ছেলে মো. মামুন মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা ভেবে যৌতুক বাবদ মামুনকে ১ ভরি ওজনের স্বর্ণ ও নগদ দেড় লাখ দিয়েছিলেন কুলসুমের দরিদ্র পিতা। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই আরো যৌতুকের জন্য কুলসুমকে প্রায়ই মারধর করতো মামুন। এরই মধ্যে তাদের ঘরে জন্ম গ্রহণ করে আরিয়ান (১৫ মাস) নামের একটি ছেলে সন্তান। স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে গত চেত্রমাসে রাগ করে বাবার বাড়ি চলে আসে কুলসুম। দীর্ঘ ৭ মাস স্ত্রী সন্তানের কোন খবর নেননি স্বামী মামুন। কয়েকজন সামাজিক ব্যক্তির সহায়তায় শনিবার তাদেরকে মিলমিশ করে দেয়া হয়। ওইদিনই কুলসুমকে স্বামীর বাড়িতে দিয়ে আসেন গ্রামের সালিসকারকরা। সোমবার দিন মামুন ও তার বাবাকে দাওয়াত দিয়ে বাড়িতে আনেন ফারূক মিয়া। দুপুরের খাবারের পর মামুন তার শ্বশুরের কাছে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ৬ লাখ টাকা দাবী করেন। নিরূপায় হয়ে ফারূক একটি জমি বিক্রি করে বুধবার দিন মামুনদের বাড়িতে গিয়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। আর বৃহস্পতিবার ফজরের সময় মেয়ে কুলসুমের লাশের খবর পান। সকলেই ছুঁটে যান মামুনদের বাড়িতে। গিয়ে দেখেন ওই বাড়ির সকলেই পালিয়েছে। মামুনদের চৌকিতে ঘুমিয়ে আছে একটি বাচ্চা। আর দুই হাঁটু মাটিতে লাগানো অবস্থায় তীরে ঝুলছে কুলসুমের মৃত দেহ। সরাইল থানা পুলিশ গৃহবধু কুলসুমের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। কুলসুমের বাবা ফারূক মিয়া, ভাই ইসমাইল, সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবুল বাশারসহ অনেকেই বলেন, কুলসুমকে হত্যা করে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়েছে। তারা নির্দোষ হলে কুলসুম নিহতের খবর বাবার বাড়িতে না দিয়ে সকলে পালিয়েছে কেন? নিহতের বাবা ফারূক মিয়া বলেন, আমার ৩ মেয়ে ও ছেলের মধ্যে কুলসুম তৃতীয়। মেয়েটার সুখের জন্য শেষ সম্বল জমিটাও বিক্রি করলাম। দুইবারে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিলাম। তারপরও মেয়েটাকে সুখ তো দূরের কথা বাঁচাতেই পারলাম না। আমার শিশু নাতিটার এখন কী অইব? মায়ের তারে কেডা করব? আল্লাহ তোমার কাছে বিচার চাই। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বলেন, লাশের গলায় কাল দাগ আছে। কুলসুমের পরিবারের মৌখিক দাবী হত্যা করা হয়েছে। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।