সিলেট-৫ আসনে জোট-সমীকরণে ঝুলেছে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

এফএনএস (সিলেট): | প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:০২ পিএম
সিলেট-৫ আসনে জোট-সমীকরণে ঝুলেছে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেটের কানাইঘাট-জকিগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। এতে দলটির অভ্যন্তরে তীব্র অসন্তোষ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে এটিই একমাত্র ঝুলন্ত আসন হওয়ায় স্থানীয় রাজনীতিতে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, দুটি কারণে সিলেট-৫ আসনের মনোনয়ন স্থগিত রেখেছে বিএনপি। সম্ভাব্য জোট গঠিত হলে আসনটি শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলোর ভোট ব্যাংকের হিসাব-নিকাশ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সংশয়ে আছে।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি জমিয়তে ইসলামের প্রার্থীকে ছেড়ে দিয়েছিল বিএনপি। এবারও একই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জমিয়তের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ওই সময়ের ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন। “জোট হোক বা না হোক, আমি সিলেট-৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।”

প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও আলোচিত মনোনয়নপ্রত্যাশী মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন)। বিভিন্ন সমাবেশে তিনি কেন্দ্রকে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়ে বলেন। “এই আসনে কোনো সুবিধাবাদীর অনুপ্রবেশ ঘটলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। আর কোনো স্যাক্রিফাইস নয়-ধানের শীষের প্রার্থী চাই।” তিনি দাবি করেন, তিন মাস আগেই তাকে প্রার্থীর বিষয়ে ‘নিশ্চিত’ করা হয়েছিল। তবে জোট হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে বলেও স্বীকার করেন।

এছাড়াও আসনটিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন সিলেট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আশিক উদ্দিন চৌধুরী, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর, আবুল হারিছ চৌধুরী কন্যা ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক লুৎফা খানম চৌধুরী স্বপ্না। 

আসনটিতে জামায়াতে ইসলাম দলটির জেলার নায়েবে আমীর হাফিজ আনোয়ার হোসেন খানকে প্রার্থী ঘোষনা করেছে। সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর ছেড়ে দেওয়া আসনটি পুণরুদ্ধারে তিনি নির্বাচনী এলাকায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এছাড়া আসনটিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা শাখার উপদেষ্টা মুফতি আবুল হাসান, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করীম আবরার। এছাড়াও নির্বাচনী তৎপরতা শুরু না করলেও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা সাব্বির আহমদ, সাইফুদ্দিন খালেদ, এমএ মতিন ও এম. জাকির হোসেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ। দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট-৫ আসনটি বিএনপি শরিকদের জন্য ছাড় দিয়ে আসছে। এবারও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তৃণমূলের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ দেখা দিতে পারে। তারা নিজেরাই প্রার্থী দিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।

আসনটিতে বিএনপি থেকে অন্তত ৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, মামুনুর রশীদ, সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আশিক উদ্দিন চৌধুরী, জাকির হোসেন, মাহবুবুল হক চৌধুরী, ইকবাল আহমদ তাপাদার, শরীফ আহমদ লস্কর, ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরী ও লুৎফা খানম চৌধুরী স্বপ্না।

স্বাধীনতার পর সিলেট-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ৪ বার, জাতীয় পার্টি ৩ বার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ২ বার জয় পেয়েছেন। বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট পেয়েছে একবার করে।

স্থানীয়ভাবে এ আসনকে “বিএনপির কপাল পোড়া আসন”বলেও উল্লেখ করা হয়।

সব মিলিয়ে সিলেট-৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বিলম্বিত হওয়ায় বিএনপির ভেতরে অস্থিরতা বাড়ছে। জোট-সমীকরণ, শরিকদের দাবি ও তৃণমূলের চাপ। এই তিনটি কারণেই আসনটি এখন বিএনপির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে