বুধবার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের উদ্যোগে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অযাচিত পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)’র হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ও বিলস্ এর নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন খান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার, পাট শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি শ. ম. জামাল উদ্দিন, বাবুল, শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, মফিদুল ইসলাম তালুকদার মোহন, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শমসের আলম, দপ্তর সম্পাদক ফারুক ইকবাল (এ্যাপোলো), প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক, মহিলা সম্পাদিকা সেলিনা আঞ্জুমান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি)’র আওতায় ২৫টি মিল চালু ছিলো। কিন্তু পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বের পাটজাত পণ্যের বাজার ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত ২৫টি জুট মিল গত ১লা জুলাই ২০২০ তারিখে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মিলগুলোতে কর্মরত প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী চাকুরি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সে সঙ্গে এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, দোকানদারসহ লক্ষ লক্ষ লোক কর্মসংস্থান হারিয়ে পথে বসেছে। এছাড়া, দেশকে প্রতি বছর বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার ও তাদের দোসররা মনগড়া পলিসি তৈরি করে বন্ধকৃত ১৩-১৪টি পাটকল নামমাত্র মূল্যে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদে লিজ প্রদান করেছে। জানা যায় যে- খুলনা, যশোর, নরসিংদী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি মিলের লিজ প্রদানে মারাত্মক দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। কোন কোন মিলের প্রথমবার টেন্ডারে লিজ মানি বেশি দেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে সে প্রতিষ্ঠানকে লিজ না দিয়ে পরবর্তীতে অনেক কম লিজ মানিতে অন্য প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়া হয়েছে। এতে করে একদিকে সরকারি সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে, অন্যদিকে কম লিজ মানির কারণে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখানে শেষ নয়, প্রথমে লিজকৃত মিলগুলোর গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারণ করা হয় ৯মাস। পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতাদের সাথে যোগসাজস করে গ্রেস পিরিয়ড ৯ মাসকে বৃদ্ধি করে ৩০ মাস করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। উৎপাদনকৃত চালু মিলে কেন ১ মাসের পরিবর্তে ৩০ মাস গ্রেস পিরিয়ড করা হলো তা বোধগম্য নয়। নিশ্চয়ই এখানে অনিয়ম করা হয়েছে। এ সকল কার্যক্রমের বড় হোতা ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও বিদায়ী পাট সচিব আব্দুর রউফ। বন্ধকৃত মিলগুলো পরবর্তীতে বেসরকারি খাতে চালু করে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের ঢোল বাজানো হলেও লিজ প্রদানকৃত ২-৩টি মিলে নামমাত্র উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু মিলগুলোতে স্থাপিত যুক্তরাজ্যের বেলফাস্ট এর জেমস মেকি এন্ড সন্স কোম্পানির মেশিন ও যন্ত্রপাতিগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে কেজি দরে নূন্যতম মূল্যে বিক্রি করে একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে মিলের মূল্যবান জায়গা-জমি দখল ও মিল অভ্যন্তরে মূল্যবান গাছ লুটপাটের সর্গরাজ্য কায়েম করা হয়েছে। এমনভাবে ধ্বংস করা হয়েছে যা আর কখনোও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সরকারের সবচেয়ে বড় কর্পোরেশন হিসেবে এর প্রচুর জায়গা-জমি ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এর কোন নিজস্ব অফিস ভবন নেই। বর্তমানে যে জায়গাটি-তে অফিস ভবন রয়েছে, এটি আদমজী জুট মিলের বিল্ডিং। সে হিসেবে এর মালিকানা থাকার কথা বিজেএমসি’র। কিন্তু এর পরিবর্তে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আদমজী এন্ড সন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে এই সমস্ত বিল্ডিংয়ের ভাড়া আদায় করছে। ফলে বিজেএমসি’র সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া বাবদ অর্থ প্রাপ্তি থেকে বিজেএমসি বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়ার অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে। এরপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে মতিঝিল তথা ঢাকা শহরে বিজেএমসি’র একমাত্র অফিস ভবন ‘করিম চেম্বার’। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের প্রেতাত্মা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বিলকিছ জাহান রিমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ঢাকা শহরে বিজেএমসির একমাত্র প্রতিষ্ঠান করিম চেম্বার (৬ষ্ঠ তলা) বিল্ডিংটি কোন স্বার্থান্বেষী মহলকে বিনামূল্যে দেয়ার চক্রান্ত চলছে। অপরদিকে, সরকার বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন আদমজী জুট মিল, গুলশানের আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল, আমিন জুট মিল, ঢাকার লতিফ বাওয়ানী এবং জুটো ফাইবার মিলসহ প্রায় ৩২৪ একর জায়গা স্থাপনাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-কে বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ২৫ (পঁচিশ) হাজার কোটি টাকা। এ টাকার সাথে বিজেএমসি’র নিকট প্রাপ্য সরকারি পাওনা সমন্বয় করলেও বিজেএমসি আরো বিপুল পরিমান টাকা সরকার/সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট পাওনা থাকবে। এছাড়া প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে ৭টি মিল বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, এ মিলগুলোর জমির পরিমান ১৯৭.৮৬ একর। এ বাবদ প্রাপ্ত সকল অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে। সদ্য বিদায়ী পাট সচিব আব্দুর রউফ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লিগের দোসর, ভারতের ‘র’ এর দালাল, মিল বন্ধের কারিগর ২০২০ সাল থেকে ২ বছর বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। মিল বন্ধের পুরস্কারস্বরূপ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করে। বস্ত্র ও পাট সচিব হয়ে পুরোদমে লিজ কার্যক্রমে অনিয়ম শুরু করে। সে সচিব হওয়ার পর কোন চেয়ারম্যান ৬/৭ মাসের অধিক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই সে তাকে অপমান অপদস্ত করে বদলী ও ওএসডি করেছে। কোন সংস্থার উন্নতির জন্য সংস্থা প্রধানকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হয়। সে জন্য তাকে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু আবদুর রউফ সচিব হওয়ার পর ২ বছরে বিজেএমসি’র ৫ জন চেয়ারম্যানকে বদলী/ওএসডি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, পাট মন্ত্রণালয় কর্তৃক শ্রমিক ও জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দল ৮ দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন ও লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। তারা আরো বলেন, বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) এর মূল্যবান সম্পদের উপর এ ধরণের অশুভ হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর আহ্বান জানান।