দক্ষিণ খুলনার ঐতিহ্যবাহী সাংবাদিক সংগঠন কপিলমুনি প্রেসক্লাবের নির্বাচনকে প্রতিহত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাইকগাছা সিনিয়র সিভিল জজ আদালতে একটি মামলা হয়েছে। যার নং-৩৬৮/২৫। নৈতিক স্থলন জণিত কারণে বহিষ্কৃত সাবেক সদস্য শেখ শামছুল আলম পিন্টুসহ তিন জন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। এদিকে কতিপয় সংবাদকর্মীকে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে সাময়ীক বহিষ্কার ও দাতা সদস্যসহ আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার রদ করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করায় অদৃশ্য প্ররোচনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সদস্যসহ সাংবাদিক মহলে। তারা মনে করছেন, বরাবরই মহল বিশেষ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সুনাম ক্ষুন্ন ও সংগঠন পরিপন্থী কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন। এজন্য তারা আদালতের কাছে সুবিচার কামনা করেছেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২৫ সালে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট চুড়ান্ত ভোটার তালিকা নির্দিষ্ট করণ হয়। এছাড়া তাদের সকলে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সংবাদপত্রে কাজ করে আসছেন। তবে ক্লাবসূত্র দাবী করছে, উক্ত ২৩ জন সদস্যের ৫ জন ডোনার (দাতা) সদস্য। তারা কখনো সংবাদপত্রের সাথে সম্পৃক্ত কিংবা সাংবাদিক (সংবাদকর্মী) হিসেবে জড়িত ছিলেননা বা আজও নেই। এছাড়া ৪ জন আজীবন সদস্য একসময় সংবাদপত্রের সাথে জড়িত থাকলেও দীর্ঘদিন সংবাদপত্রের বাইরে থেকে নিজেদের ব্যবসাসহ চাকুরীরত রয়েছেন। অথচ উক্ত ৯ জন সদস্য সংবাদপত্রের সাথে জড়িত না থাকলেও তাদেরকে বরাবর ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। যদিও তাদের প্রার্থীতা বন্ধ থাকে। এতে বরাবর প্রতিটি নির্বাচনে ব্যবসায়ী নির্ভর প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। একটি সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধি নির্বাচনে অসাংবাদিকদের ভোটাধিকার রদ করতে সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর বিশেষ সাধারণ সভায় সম্মানিত দাতা ও আজীবন সদস্যদের ভোটাধিকার রদ পাশাপাশি তাদের ভূমিকার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দুটি পৃথক ক্যাটাগরীর তালিকা প্রস্তুতকরত ক্লাবের অভ্যন্তরে টানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। একই সাথে সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৩১ এর (গ) ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। একই সভায় ক্লাবের অপর সদস্য জি,এম, আসলাম হোসেন সম্প্রতি মাদকদ্রব্যসহ যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতার ও পরবর্তীতে পুলিশ তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় ক্লাবের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়। ফলে অনুচ্ছেদ ১০ এর (ঝ) ধারা মোতাকে, এছাড়া শেখ আব্দুল গফুর, এস,এম আব্দুর রহমান, জি,এম মোস্তাক আহম্মেদ ক্লাবের কোন সভায় অংশগ্রহন না করায় এবং প্রেসক্লাব পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করায় গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৫ এর (খ) ধারা মোতাবেক তাদের সদস্য পদ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ক্লাবের সাবেক সদস্য জি,এম, হেদায়েত আলী টুকু, জি,এম হাসান ইমাম দীর্ঘ দিন সংবাদপত্রের বাইরে থাকায় অনুচ্ছেদ ১০ এর (খ) ধারা মোতাবেক ও আব্দুর রাজ্জাক রাজু, মিলন কুমার দাশ বিগত ২০১৫ থেকে ২০২৩ ও ২০২৪/২৫ মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালনকালে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্বপালন না করে আয়-ব্যায়ের হিসাব দাখিল না করা, ম্যাগাজিন প্রকাশনার নামে তাতে বিজ্ঞাপন প্রকাশের কথা বলে বাজার ব্যাবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন এমনকি তার হিসাব লিপিবদ্ধ না করে উপরন্তু বিধি মোতাবেক দায়িত্ব হস্তান্তর ও বুঝে না দেওয়ায় অনুচ্ছেদ ২২ এর (গ) মোতাবেক সর্ব সম্মতিক্রমে তাদের সদস্যপদ আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সবচেয়ে মজার বিষয়, নৈতিক স্থলনজণিত কারণে সদস্য পদ খারিজ হওয়ায় ২০২৪-২৫ দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে প্রণিত ভোটার তালিকায় নাম না থাকলেও শেখ শামছুল আলম পিন্টু প্রথম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন।
এদিকে কপিলমুনি প্রেসক্লাবের ২০২৬-২০২৭ কার্যকরী পরিষদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে এমনকি নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা ও মনোনয়নপত্র বিক্রয়, জমাদান, বাছাই ও প্রত্যাহার পর্ব সম্পন্ন হলে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন কমিশনসহ ক্লাবের ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা ও অপপ্রচারের ঘটনায় সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট মহলে নানা উদ্বেগ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এব্যাপারে তারা মাননীয় আদালতের সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোনে ৫ আগস্ট অভ্যুত্থান পরবর্তী ২০২৪-২৫ পরিষদের অধিকাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা পদত্যাগ করলে গত ৯ সেপ্টেম্বর দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি এইচ এম শফিউল ইসলামকে আহ্বায়ক ও পাঠকপ্রিয় জাতীয় দৈনিক দিনকাল পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম বজলুকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। এরপর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় উক্ত কমিটি সর্বশেষ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
এ ব্যাপারে কপিলমুনি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এইচ,এম, শফিউল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় সদস্য সংযোজন বিয়োজন করে সর্ব সম্মতিক্রমে ভোটার তালিকা প্রসয়ন ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় ক্লাবের বিতর্কীত
সাবেক সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে আদালতে একটি মামলা করেছে। তিনি আরোও বলেন নির্বাচন পরবর্তী সাময়ীক বহিষ্কারপ্রাপ্তদের বিষয়গুলি পূণর্বিবেচনা করা হবে। আসন্ন নির্বাচনের নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, প্রেসক্লাবের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবেদন ও খসড়া ভোটার তালিকা সরবরাহ করা হলে তারা যৌথভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। কোথাও কোন অসংগতি থাকলে সেটা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের সাথে তাদের ব্যাপার। তাকেসহ স্থানীয় অপর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মামলায় সম্পৃক্ত করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।